যান চলাচলের ব্যাপ্তি বাড়বে, কমবে টোল

হাসান আকবর | শনিবার , ৯ নভেম্বর, ২০২৪ at ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের ব্যাপ্তি বাড়ানোর পাশাপাশি টোল কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নতুন বোর্ড টোল কমানোর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। একইসাথে সিএনজি টেক্সি এবং মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ইতিপূর্বে টোল হার নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হলেও এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাহনকে এক্সপ্রেসওয়েতে নিষিদ্ধ রাখা হয়েছিল। তবে টোল নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হলেও কন্টেনার মুভার চলাচল নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। আগে শুধুমাত্র লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত টোল নির্ধারণ করা হলেও নতুন প্রস্তাবনায় একাধিক পয়েন্টে ওঠানামার টোল হার নির্ধারণ করে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।

সিডিএ সূত্র জানিয়েছে, নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬.৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কয়েক দফা সময় এবং ব্যয় বাড়িয়ে সম্পন্ন করা হয় এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির মূল কাজ শেষ হলেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে। বর্তমানে জিইসি মোড়সহ একাধিক পয়েন্টে র‌্যাম্প নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে ইতোমধ্যে লালখান বাজারে মুরাদপুর ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে মুরাদপুর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে গড়ে উঠেছে। যুক্ত হয়েছে বায়েজিদ রোডও। বর্তমানে মুরাদপুর এন মোহাম্মদ প্লাস্টিকের সামনে কিংবা বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে মাত্র ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরসহ সন্নিহিত এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে। পতেঙ্গা থেকে শহরে আসার সময় লালখান বাজার কিংবা টাইগারপাসের আমবাগান রোডে নামা যাচ্ছে। গত ২৮ আগস্ট থেকে শহরের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, নগরীতে ইতিপূর্বে নির্মিত ফ্লাইওভার টোল ফ্রি থাকলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চলাচলের টোল হার নির্ধারণ করে সিডিএ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে; যাতে মোটরসাইকেল, সিএনজি টেক্সি এবং কন্টেনার মুভারকে এক্সপ্রেসওয়েতে নিষিদ্ধ রেখে অন্যান্য বাহনের টোল হার অনুমোদন নেওয়া হয়। উক্ত টোল হার ছিল প্রাইভেটকারের টোল ১০০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, মিনিবাস ২০০, বাস ৩০০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০ টাকা ও কাভার্ডভ্যানের জন্য ৫০০ টাকা।

গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সিডিএতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের পাশাপাশি নতুন বোর্ড গঠন করা হয়। নতুন বোর্ড আগের টোল হার কমিয়ে নতুন হার নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসাথে আগে নিষিদ্ধ রাখা মোটরসাইকেল এবং সিএনজি টেক্সি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে টোল নির্ধারণ করে। এতে কন্টেনার মুভারের টোল নির্ধারণ করা হলেও বিশালাকৃতির গাড়িগুলোর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় নতুন টোল হার নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। আগের প্রস্তাবে শুধু লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত টোল হার নির্ধারণ করা হলেও নতুন প্রস্তাবে ১২টি যানবাহনের তিনটি জায়গায় ওঠানামার টোল হার নির্ধারণ করে নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

নতুন টোল হারের প্রস্তাবনায় বলা হয়, জিইসি, সিআরবি, আগ্রাবাদ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড, সিবিচে নামা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ১৫, অটোরিকশা (তিন চাকা) ৩০, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৪৫০ এবং কন্টেনার মুভার ৪৫০ টাকা।

সিবিচ, কেইপিজেড, সিইপিজেড থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, লালখান বাজারে নামা গাড়িগুলোর টোল হার মোটরসাইকেল ১৫, অটোরিকশা ৩০, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০ ও কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা।

অপরদিকে জিইসি, টাইগারপাস থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ, ফকিরহাট নামা গাড়িগুলোর টোল মোটরসাইকেল ১০, অটোরিকশা ২০, প্রাইভেটকার ৫০, জিপ ৭০, মাইক্রোবাস ৯০, পিকআপ ১৩০, মিনিবাস ১৮০, বাস ২৫০, ট্রাক (চার চাকা) ১৮০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কন্টেনার মুভারের টোল প্রস্তাব করা হলেও এই ধরনের বাহনের এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামা নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমরা শুরু থেকে টোল নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরু করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যান চলাচলে কোথায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করতে ২৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে যানবাহন চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করেছি। আগে যে টোল মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছিল, তা থেকে কমিয়ে পুনরায় নির্ধারণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নতুন টোলের বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার পর টোল আদায়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর যানবাহন থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সঙ্গে ‘মামলা’ও বাতিল হবে : আইন উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধমহামায়া লেকে তরুণীকে গণধর্ষণ, আটক ১