যানবাহনের গতিসীমা নিয়ে দেশের প্রথম মাস মিডিয়া ক্যাম্পেইন

ছোট ছোট ভিডিওচিত্রে চালকদের গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান

| শুক্রবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদে গাড়ি চালানোর অন্যতম শর্ত গতিসীমা মেনে চলা। গতিসীমা মেনে চললে জীবন বাঁচবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এছাড়া চসিক সড়ক নিরাপত্তায় ভাইটাল স্ট্রাটেজিসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। জীবন বাঁচানোর এ কাজ চসিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অব্যাহত রাখবে। ‘মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪’ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে মাস মিডিয়া ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে চসিক সম্মেলন কক্ষে এ ক্যাম্পেইন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। মেয়র কম্পিউটারে ক্লিক করে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে মাস মিডিয়া ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে তিনি দুইটি ভিন্ন পোস্টারও উন্মোচন করেন।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির (বিআইজিআরএস) আওতায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কারিগরি সহায়তায় এ ক্যাম্পেইনের প্রচারণা উপকরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, যেগুলো গতি নিয়ন্ত্রণ করে চলতে পারে না। এদের অনিয়ন্ত্রিত গতি রোড ক্র্যাশের ঝুঁকি বাড়ায়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ যান নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। এসময় তিনি চসিক ও সিএমপির যৌথভাবে প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ থেকে ২০২৩ সময়কালে চট্টগ্রাম নগরীতে ৩৬২টি রোড ক্র্যাশে ২৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ শতাধিক। পাশাপাশি ২০২৪ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করে কিছুদিনের মধ্যেই নতুন রিপোর্ট প্রকাশ হবে বলে জানতে পেরেছি। এসব ডেটা কাজে লাগিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবো।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিকদক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান। তিনি বলেন, নগরীতে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগে কাজ করছে পুলিশ। চসিকের সাথে আমরা একযোগে কাজ করছি। গতিসীমা মেনে চলতে চালকদের উদ্বুদ্ধ করতে এই ক্যাম্পেইন কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে সড়ক নিরাপত্তায় বিআইজিআরএসএর কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্বের ২৭টি শহর বিআইজিআরএস কর্মসূচির আওতায় রোড ক্র্যাশ জনিত অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিশ্বব্যাপী সড়ক নিরাপত্তায় গতি নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, % গতি কমালে রোড ক্র্যাশের ঝুঁকি কমে ৩০%। গতির কারণে রোড ক্র্যাশের ঝুঁকি যেমন বাড়ে, তেমনি রোড ক্র্যাশের ভয়াবহতাও বাড়ে। এ জন্য গতিসীমা নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম সুজন ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, এ ক্যাম্পেইনের মধ্যে রয়েছে ৩০ সেকেন্ড, ৪৫ সেকেন্ড, ১ মিনিট ও ৯০ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ভিডিওচিত্র এবং এগুলো ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সড়কে ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রচার/প্রদর্শন করা হবে। ভিডিওচিত্রে রোড ক্র্যাশে নিহত তরুণ সংগঠক ও রাজনীতিক আরিফুল ইসলামের সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা নীলা অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি তার ও তাদের সন্তানের প্রিয় মানুষকে হারানোর বিষয়টি ও তৎপরবর্তী অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এবং একইসঙ্গে তিনি সড়কে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এতে সড়কের পাশে সাইনেজ আকারে স্থাপনের জন্য দুটি ভিন্ন ডিজাইনের পোস্টার করা হয়েছে। এসব পোস্টারে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রচারণা উপকরণ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সিএমপির মাধ্যমেও প্রচার করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১১টার পর ঢাকার সড়কে আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তার বন্ধু সৌভিক অর্জুন (৪৪) দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান। অনুষ্ঠানে বিআরটিএ, সিএমপি, সিডিএ, ইপসা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগ্রাবাদে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসে দুদকের অভিযান
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির জন্ম হয়েছে ‘হ্যাঁ’ ভোটে, মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটে : পাটওয়ারী