রমজানের বাকি আর মাত্র ক’দিন। এর মধ্যে নগরের সড়কগুলোতে যানজট বেড়ে গেছে। প্রতি বছর রমজান মাসের কয়েকদিন আগে থেকে নগরীর বাসিন্দারা অসহনীয় যানজটের মখোমুখি হন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। রমজানের শেষ সপ্তাহে বিপণিকেন্দ্রগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়ে যাবে। তখন যানজট তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে নগরীর বিভিন্ন জোনের ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ আজাদীকে জানান, এবার রমজান মাস ঘিরে আগেভাগেই বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিন ভাগে দায়িত্ব পালন করবে ট্রাফিক পুলিশ। তাই এ বছর যানজট কম থাকবে।
সিএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক–পশ্চিম) তারেক আহম্মেদ আজাদীকে বলেন, আমার জোনে গত তিন–চার বছর ধরে যানজট নেই। এবারও হবে না বলে আশা করি। কারণ আমি জয়েন করার পর যানজটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নির্মূলে ব্যবস্থা নিয়েছি। এর ফলে অলঙ্কারের মতো এলাকায়ও এখন আর যানজট হয় না। দ্বিতীয়ত রমজান মাসে সার্জেন্ট, টিআইদের পাশাপাশি আমরা সিনিয়র অফিসাররাও মাঠে সক্রিয় থাকি। ইতিমধ্যে আমরা সবার মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছি, যাতে ঈদ পর্যন্ত নগরে অস্বস্তিকর যানজট এড়ানো সম্ভব হয়। ২২ মার্চ বন্দর ও পশ্চিম জোনের ট্রাফিক বিভাগ আমাদের এলাকার পরিবহন মালিক–শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করে আর কী করা যায় সে ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে কাজ করব।
ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানান, রোজার ঈদের সময় নগরের বড় বড় বিপণিকেন্দ্রের আশপাশে যানজট তীব্র হয়। তাই ওই এলাকাগুলোতে যানবাহন শাখার পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করবে কমিউনিটি পুলিশ। বিশেষ করে নিউ মার্কেট, আমতলা, তামাকুমন্ডি লেন, আমীন সেন্টার, মিমি সুপার, আফমি প্লাজা, সেন্ট্রাল প্লাজা, চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স, ইউনেস্কো, আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকী প্লাজা, ব্যাংকক–সিঙ্গাপুর মার্কেট, বে–শপিংসহ আরও কয়েকটি বিপণিকেন্দ্রের দিকে পুলিশের নজর রয়েছে।
নগরীর মার্কেট কেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের পক্ষ থেকে ৮টি দিক–নির্দেশনা দিয়েছেন উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক–উত্তর) জয়নুল আবেদীন। নির্দেশনাগুলো হলো, মার্কেট কেন্দ্রিক যানজট নিরসনের জন্য রাস্তা ও মার্কেটের সামনে পার্কিং না করা, মার্কেটের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবশ্যই বিকল্প পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং নিজস্ব পার্কিং প্লেস পূর্ণ হলে তা ডিসপ্লে করা, রাস্তায় কোনো গাড়ি পার্কিং না করা, রমজান মাসে ট্রাফিক পুলিশকে যানজট নিরসনে সহায়তা করার জন্য মার্কেট কমিটি কর্তৃক পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী–ভলান্টিয়ারদের নির্দিষ্ট পোশাক জ্যাকেটসহ নিয়োগ করা, ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক নির্দেশিত রোড ডাইভারসন ব্যবস্থাপনায় মার্কেট সমিতি কর্তৃক প্রয়োজনীয় সহায়তা করা, ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় ও যোগাযোগ করার জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নির্ধারণ করা, যেসব মার্কেটের পার্কিং স্থান ব্যবহৃত হয় না সেই সকল পার্কিং স্থান খুলে দেওয়া নিশ্চিত করা এবং মার্কেটের সম্মুখ রাস্তা বা প্রবেশপথ নিজস্ব জনবল দ্বারা পরিষ্কার রাখা এবং আগত যানবাহনের শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, আসন্ন রমজান মাসে শপিং মল ও মার্কেট কেন্দ্রিক যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও যানজট নিরসনে মার্কেট ও পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে, নিউ মার্কেট, টেরীবাজার, বঙির হাট, রেয়াজউদ্দির বাজারসহ বড়–ছোট সকল মার্কেট ও শপিংমল কেন্দ্রিক যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাস্তা ও মার্কেটের সামনে পার্কিং করা যাবে না। মেইন রোড কেন্দ্রিক মার্কেটসমূহের সম্মুখ রাস্তার প্রবেশ পথ নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিষ্কার রাখা ও আগত যানবাহনে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। রিকশা–সিএনজি টেঙি ও হকারমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা দখল করে দাঁড়ানো কিংবা ডাবল লাইনে পার্ক করা যানবাহন অপসারণ করা হবে। সকল গুরুত্বপূর্ণ ফুটপাতে পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ভাসমান দোকান–পাট অপসারণ করা হবে। দিনের বেলায় ভারী যানবাহন রাস্তার পাশে রেখে দোকান বা মার্কেটের মালামাল লোড–আনলোড থেকে বিরত থাকতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান–পাট অপসারণ করতে হবে। সড়কের মূল পয়েন্টে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমতল ও নিউ মার্কেট থেকে চলাচলকারী অটো টেম্পো, বাস ও মিনিবাসসমূহের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে এবং এ এলাকা ভাসমান হকারমুক্ত রাখা হবে। শাহ আমানত মার্কেট সংলগ্ন আমতল মোড় ও আশপাশের এলাকাসমূহে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী রিকশা, সিএনজি টেঙি, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও মোটরসাইকেল দাঁড়ানো যাবে না। স্টেশন রোডে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও গোলাম রসুল মার্কেটের প্রবেশ মুখে সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পণ্যদ্রব্য সকাল ৮টার মধ্যে লোড–আনলোড করতে হবে। ব্যবসায়ী সমিতি কর্তৃক রাস্তার পাশে অবৈধ দোকান–পাট উচ্ছেদপূর্বক ফুটপাত ও সড়কে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহন চলাচলের সকল রাস্তায় সংশ্লিষ্ট সমিতির নিজস্ব লোকবল দিয়ে হকারমুক্ত রাখতে হবে। স্টেশন রোড ফুট ওভারব্রিজের পাশের রেলওয়ের খালি জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে মানুষের সমাগম বেশি থাকবে সেখানে জনবল বাড়ানো হবে। ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার জন্য মার্কেটের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। অতিরিক্ত ৬০ জন পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে ২৯২ জন। রাস্তা ও ফুটপাতের ওপর ইফতারের দোকান বসতে না দেওয়া, বিভিন্ন শপিংমলের সামনে অবৈধ পার্কিং রোধ, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও মলম পার্টির উপদ্রব রোধে কাজ করবে ট্রাফিক পুলিশ। রমজানে নতুন করে কোনো হকারকে রাস্তায় বসতে দেওয়া হবে না। বাইরে থেকে নগরে প্রবেশ করা রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য চসিকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ওয়াসার সঙ্গে কথা হয়েছে, যেন নতুন করে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি না করে।