যানজট কমাতে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের স্থান তৈরির পাশাপাশি পার্কিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু বড় প্রকল্প গ্রহণ করায় চট্টগ্রামে গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতের চট্টগ্রামকে ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত করতে হলে প্রযুক্তিভিক্তিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে। নগরীতে পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় পর্যাপ্ত রাস্তা থাকা সত্ত্বেও নগরীর কিছু পয়েন্টে যানজট তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আমি দীর্ঘদিন ধরে পে–পার্কিং চালুর পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মতামতের ভিত্তিতে প্রযুক্তিভিত্তিক পে–পার্কিং চালু করা গেলে নগরীর যানজট অনেকটা কমে আসবে। গত বৃহস্পতিবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চসিক, সিএমপি এবং বিআরটিএর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পে–পার্কিংকে জনপ্রিয় করতে প্রয়োজনে গণবিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করব আমরা। তিনি নগরীকে হকারমুক্ত করতে ‘নাইট মার্কেট’ চালুর প্রস্তাব দেন। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক পে–পার্কিং চালুর পাশাপাশি ব্যাটারি রিকশা নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহন বিকেন্দ্রীকরণে সিএমপি এবং বিআরটিএ’র সহযোগিতা কামনা করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান মিয়া চসিকের পে–পার্কিং চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রকল্পের ক্ষেত্রে পার্কিং করা গাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রকল্পের প্রয়োজনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করতে হবে। মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম বলেন, পে–পার্কিং চালু হলে সেটি হবে চট্টগ্রামের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যানজট নিরসনে বেদখল হওয়া ফুটপাত উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজট এখন শুধু চট্টগ্রাম বা ঢাকারই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। যানজট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজটে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। আমাদের দেশের প্রায় রাস্তাই প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মিত ও যথেষ্ট প্রসারিত। কিন্তু যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে রাস্তা দখল করা হচ্ছে। ফলে সময়–অসময়ে লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে দোকানপাট গড়ে ওঠার কারণেও তীব্র যানজট হচ্ছে। এগুলো উচ্ছেদ করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হবে। যানজট নিরসনে প্রথমত যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করতে হবে।
যানজট নগরবাসীর মনোপীড়ার কারণ। দুর্ভোগে পড়ার কথা নতুন নয়। যানজটে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শরীর–মনে যে চাপ পড়ে, তার ফলে বিবিধ রোগে, মনোবিকারে আক্রান্ত হচ্ছে নগরের মানুষ। কর্মী–মানুষ সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারে না। পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হয়। এসবের সামষ্টিক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়ছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সমন্বয় জরুরি। যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসনও দায়ী, সে কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্রাম থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে কাজের খোঁজে। চট্টগ্রাম শহর পুরোপুরি অর্থনীতিনির্ভর শহর হয়ে গেছে। সরকারের যেসব পরিকল্পনা, তাতে এই অভিবাসন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, অবকাঠামোর উন্নয়ন আর আইনের কথা যতই বলা হোক না কেন, সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। যে কোনো পর্যায়েই যাওয়া হোক, যানজট হবেই, যদি মানুষের সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে রাখা না যায়। এর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যে শহরে লোকসংখ্যা বেশি, সেখানে তিন ধরনের পরিবহনব্যবস্থা দরকার– সারফেস, এলিভেটর ও আন্ডারগ্রাউন্ড। আমাদের এখানে শুধু সারফেসটাই আছে। এটা কোনো বড় শহরের চিত্র নয়।
সিটি মেয়র যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, তা বাস্তবায়ন করা গেলে নগরীতে যানজট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে বলে আমরা মনে করি। মূলত যানজটমুক্ত হওয়ার জন্য করণীয় হলো সড়কগুলো শতভাগ দখলমুক্ত রাখা। সড়কের দুই পাশে ফুটপাতের ওপর ভাসমান দোকান বসা সম্পূর্ণ বন্ধ করা না হলে ও অবৈধ গাড়ি পার্কিং দমন করতে না পারলে কখনো সড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখা সম্ভব হবে না।