যানজট ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ চাই

জামাল উদ্দিন বাবুল | বৃহস্পতিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কথিত আছে যে শহরে কাকের বিচরণ ব্যাপক সে শহর নোংরা ও ময়লা আবর্জনার ভাগাড়, যে শহরে যানবাহনের চলাচলের কোন শৃঙ্খলা নেই সে শহরের আইন শৃঙ্খলা তথৈবচ। আর যে ছাত্রের পড়ার টেবিলের বইপত্র অগোছালো সে ছাত্র পড়ালেখায় অমনোযোগী। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বলা যায় চট্টগ্রাম সিটি এখন বহুমাত্রিক সমস্যার আবর্তে জর্জরিত। জুলাই বিপ্লবের পর সরকার পরিবর্তন এর সাথে সাথে কিছু কিছু সমস্যা রয়ে গেছে যা পূর্বেও ছিল।

তবে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বসে নেই। তারা যার যার অবস্থান থেকে সমস্যা উত্তরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মোদ্দা কথা হলো শুধু কি প্রশাসন একক ভাবে বিরাজমান সমস্যার মোকাবেলা করবে? জন সম্পৃক্ততা কি অপরিহার্য নয়? পরিবেশ দূষণ ও যত্রতত্র ময়লা ময়লা আবর্জনা ফেলে জলাবদ্ধতার জন্য নাগরিক সমাজ কি দায়ী নয় ?

নগরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নালা নর্দমা ও খালগুলো ককসিট, পলিথিন, খালি পানির বোতল, প্লাস্টিকের সামগ্রী ও বাসা বাড়ির বর্জ্য ইত্যাদি ফেলার কারণে এসবের গভীরতা হ্রাস পেয়েছে ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগরের প্রায় এলাকায় ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকলেও অনেক আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এদের কাছে ময়লা আবর্জনা না দিয়ে গৃহকর্মী দ্বারা কিংবা নিজেরা ইচ্ছেমত রাস্তার পাশে কিংবা নালায় তা ফেলে জেনে শুনে পরিবেশের ক্ষতি করছেন। এব্যাপারে সিটি করপোরেশন এর কঠোর নির্দেশনা জারী করা ও নজরদারীর আওতায় এনে প্রয়োজনে জরিমানার বিধান থাকা দরকার। পাড়া মহল্লায় মতবিনিময় সভা আহ্বান করে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো গেলে সুফল পাওয়া যেতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমানে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে নগরের নালা ও খালের দুপাশে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং সাথে সাথে খালের দুপাশে রিটেইলিং ওয়াল নির্মাণসহ সংস্কার কার্যক্রম চালু রয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে এ মেঘা প্রকল্প শেষ হলে জলাবদ্ধতার কবল থেকে নগরের জনগণ মুক্তি পেতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে নালা খাল এ সবের গভীরতা বাড়ানো না হলে প্রত্যাশিত ফল নাও পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া খালের মুখ থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এবার আসা যাক নগরের সড়ক, ফুটপাত ও যানবাহনের চলাচলের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা বিরাজমান সে সব বিষয়ে আলোচনা। যে কোন নগর কিংবা শহরে ৩০% শতাংশ রাস্তা ও ফুটপাত থাকার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম সিটিতে রয়েছে মাত্র ৯% শতাংশ সড়ক ও ফুটপাত। প্রতিদিন এসব সড়কে নতুন নতুন যানবাহন নামছে। বাড়ছে সড়কের উপর চাপ। বিগত বছরগুলোতে যে ধরনের যানজট ছিল বর্তমানে সে হার বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। যানজটে নগরীর সড়কে জনসাধারণের ভোগান্তি উঠেছে চরমে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবির সড়কে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ কর্মঘণ্টা। যত্রতত্র পার্কিং, হকার সহ বিভিন্ন ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের ফুটপাতসহ রাস্তার বিরাট অংশ দখল, অবৈধ স্ট্যান্ড, হাজার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, সাধারণ রিকশাার পাশাপাশি ব্যাটারী চালিত রিকশার বেপরোয়া দাপটে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে এক অরাজক পরিস্থিতি।

চট্টগ্রাম নগরে ক্রসিং বা মোড় রয়েছে প্রায় ১৫০টির মত। চৌরাস্তা ও তিন রাস্তার প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে রয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব স্থানে গণপরিবহনের বাসগুলো রাস্তার মাঝখানে যাত্রী উঠানামা করে। এ ছাড়াও রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, সাধারণ রিক্সা ও ব্যাটারী চালিত রিকশার যত্রতত্র অবস্থান ও যাত্রীর জন্য হাঁকডাক। এসব পথে চলতে গিয়ে পথচারীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বিশেষ করে মহিলা ও স্কুল কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দামপাড়া গরীবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় দূরপাল্লার বাস স্ট্যান্ড থাকার পরও অনেক সময় বড় বড় বাসগুলো বিক্ষিপ্তভাবে রাস্তার পাশে পার্কিং করে রাখে বিশেষ করে স্টেশন রোডের বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ডের দূরপাল্লার বাসের সারি পুরাতন রেল স্টেশনের সামনে পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে এর ফলে ঐ সড়কেও নিত্য যানজট লেগে থাকে। নগরীর জিইসি মোড়, ষোলশহর দুই নাম্বার গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দার হাট, লালখান বাজার, টাইগারপাস, কাজীর দেউড়ী, চকবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার, স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, কদমতলী, মাঝিরঘাট, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, বন্দর, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং সহ নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক জুড়ে দিনমান যানজটে নাকাল নগরবাসী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সামনে অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। নগরের কোথাও অটো ট্রাফিক সিগন্যালিং সিস্টেম চালু না থাকা খুবই দুঃখজনক। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারা ও লেজার লাইটের সংকেত দিয়ে যানবহন নিয়ন্ত্রণ কতটুকু সফলতা পাবে তা বোধগম্য নয়। প্রাপ্ত সূত্র মতে জানা যায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১৯৮৯৯০ সালে নগরের বহু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলোতে অটো সিগন্যালিং সিস্টেম চালু করার জন্য সিগন্যাল লাইট স্থাপন করার উদ্যোগ নিলেও পরবর্তী কালে তা ভেস্তে যায়। এনিয়ে বেশ কয়েকবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হলে সে প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। সাধারণ জনগণের দাবী সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে অবিলম্বে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব বহুলাংশে বাড়ানো হোক এবং অটো সিগন্যালিং সিস্টেম চালু করা হোক যাতে যানজটমুক্ত একটি নগরী জনগণ উপহার পেতে পারে। পৃথিবীর সব দেশে সড়কে যানজট আছে তবে বিশৃঙ্খলা নেই। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ জনদুর্ভোগ লাঘবে এ সমস্যা সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

লেখক: সভাপতি, নবীন মেলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহুমাত্রিকতায় অনন্য হুমায়ূন আহমেদ
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযুদ্ধে এ কে খানের ভাই এম আর খান ও তাঁর তিন পুত্রের অন্তর্ধান দিবস স্মরণে