ঘুরংফুরং নামের এক লোক বাস করতো ধরলা নদীতে জেগে উঠা ট্যাপার চরে । তার ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো যাদুবিদ্যা শিখবে। তাই সে একদিন সবার কাছে বলে চলে যায় দমহর নামে এক যাদুর দেশে। সেখানে গিয়ে যাদুমহারাজের কাছে তার ইচ্ছার কথা খুলে বলে। যাদুমহারাজ বলে ঠিক আছে সব ব্যবস্থা করে দিব। এই বলে ঘুরংফুরংকে নিয়মিত যাদু শেখাতে থাকে। দীর্ঘ ছয় মাস যাদু শেখানোর পর যাদুমহারাজ সবার মতোই ঘুরংফুরংকে পরীক্ষা নেয়। পরিক্ষায় ঘুরংফুরং সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়। যাদুমহারাজ জামরুল গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি করা এক যাদুর কাঠি সনদ হিসেবে ঘুরংফুরংয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলে এটাই তোমার সনদ।এখন থেকে তুমি হলে যাদুরাজ। তবে কখনো কোনো মানুষের ক্ষতি করবে না। মানুষের ক্ষতি করলে যাদু ও যাদুর কাঠির ক্ষমতা সব নষ্ট হয়ে যাবে। তোমার বয়স কম, এমন বয়সের মানুষকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হয়না কারণ তাদের রাগ ও জেদ বেশী। তারা বেশী কৌতূহলী হয়ে মানুষের ক্ষতি করে ফেলে। তোমাকে দেখে এবং তোমার নরম সুরে কথা শুনে তোমার প্রতি আমার মায়া জাগে তাই তোমাকে সব শেখালাম। এই বলে যাদুর কাঠি পরিচালনা করার জন্য একটি এক মন্ত্র শিয়ে দেয়–
যারে কাঠি উড়ে যা
গিয়ে শত্রুর শক্তি খা,
দুষ্ট জিন ভূত সব ধরে
নিয়ে আসবি এই চরে।
এই মন্ত্র শিখে ঘুরংফুরং যাদুর কাঠি নিয়ে ট্যাপার চরে ফিরে এসে চিকিৎসার কাজ শুরু করে দেয়। কেউ ভূত ধরা রোগী কেউ বদ জিনে ধরা রোগী নিয়ে আসতে থাকে যাদুরাজের কাছে। সব রোগীর চিকিৎসা করে ভালো করে দেয় যাদুরাজ। এভাবে যাদুরাজের সুনাম দিক দিগন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জিন বা ভূত যতো দূরেই থাকনা কেনো মন্ত্র পড়ে কাঠিতে ফু দিলেই কাঠি উড়ে গিয়ে ধরে নিয়ে আসে যাদুরাজের কাছে। যাদুরাজ সেই দুষ্ট ভূত আর বদ জিনকে ধরে ধরে কাক বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেয়। এতে করে যাদুরাজ অনেক টাকা পয়সাও উপার্জনও করতে থাকে। রোগীও আসতে থাকে অনেক, সাথে টাকাও যেনো উড়ে আসতে থাকে। শেষে টাকার নেশায় ঘুরংফুরং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। টাকা চাই আরো টাকা দরকার।
এরপর এক মিথ্যাবাদী এসে যাদুরাজকে বলে আমার এক বিঘা জমি চরের মধ্যে ছিলো, জমিটা নিমাই নামে একজন খারাপ মানুষ তার লোকজন নিয়ে দখল করেছে। সে কিছুতেই জমিটি আমাকে আর ফেরৎ দিচ্ছে না। আপনি যদি আমাকে জমটি ফেরত পেতে সাহায্য করেন আমি আপনাকে এক লক্ষ টাকা দিব। টাকার লোভে যাদুরাজ রাজি হয়ে বলে ঠিক আছে কাল সকালে আসবে। আমি রাতের মধ্যে কিছু বাঁশ কেটে সেগুলি মন্তব্য পড়ে ফু দিয়ে রাখব। সকালে যাদুর কাঠির সাথে আকাশে উড়িয়ে দিব। আর গিয়ে তোমার জমিতে গিয়ে যাদের পাবে তাদের সবাইকে আঘাৎ করে ধরাশায়ী করে দিবে। তারের মধ্যে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে আর বাকিরা ভয়ে জমি ছেড়ে পালিয়ে যাবে আর কোনো দিন জমিতে আসার সাহস করবে না। আসলে নিমাই ক‘দিন আগে জমিটি বিক্রি করে সেই টাকা সব জুয়া খেলে হারিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জমি ফিরে পেতে এই চক্রান্ত করে। যদুরাজের কথা শুনে নিমাই বাড়ি চলে গিয়ে পরদিন সকালে আবার যাদুরাজের বাড়ি যায়। যাদুরাজ এক লক্ষ টাকা আগে হাতে নিয়ে যা করার তাই করে। যাদুর কাঠি ও বাঁশের লাঠি একসাথে উড়ে গিয়ে সেই জমিতে তুমুল কাণ্ড শুরু করলে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। কেউ কেউ দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। এমন অবস্থা দেখে আর কেউ জমিতে আসে না। নিমাই জমি দখল করে নেয়।
এর পর থেকে যাদুরাজের কোনো যাদুই আর কাজে লাগে না। সে একেবারেই হতাশ হয়ে যায়। তখন মনে গুরুর দেওয়া পরামর্শ মনে পড়ে গিয়ে অনুতপ্ত হয় হায় হায় করতে থাকে।