যাত্রীবাহী ট্রেনে ছয়শ জনের নিরাপত্তায় পুলিশ মাত্র ৩ জন

দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে আরএনবি সদস্যদের ডিউটি বাতিল কমে গেল চারজন, শঙ্কায় যাত্রীরা

শুকলাল দাশ | শনিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন রুটে ১৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তায় দীর্ঘদিন ধরে ৩ জন জিআরপি পুলিশের সঙ্গে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ৪ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী আরএনবির ২ জন এবং জিআরপির ৬ জন সদস্যের বিভিন্ন অনিয়মের (টিকিটবিহীন যাত্রী তোলার কারণে) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। দুদকের এই চিঠি পাওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রণালয় ১ সেপ্টেম্বর থেকে সকল যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে আরএনবি সদস্যদের ট্রেনের ডিউটি বন্ধ করে দেয়। তবে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ যাত্রী থাকেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পথিমধ্যে অনেক ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয় থাকে। মাত্র সামান্য একটি অজুহাতে প্রতিটি ট্রেন থেকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্তটা সঠিক হয়নি। এখন রাত্রিবেলা যেসব ট্রেন যায় সেগুলোতে তো নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) মাত্র ৩ জন সদস্য ডিউটি করেন। যা যাত্রীর নিরাপত্তায় একেবারেই নগণ্য বলে স্বীকার করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ কর্মকর্তা এবং মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলীরা। যাত্রী সাধারণও বলছেন এ সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।

এই ব্যাপারে জিআরপি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা দেখার বিষয়টি জিআরপি পুলিশের। একটি ট্রেনে তো বেশি পুলিশের দরকার হয় না। থানা পুলিশের যারা বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল ডিউটি করে সেখানে তো ৩ জন বা ৪জনের একটি টিম দায়িত্ব পালন করে। যদি সেখানে আরো পুলিশের দরকার হয় তখন তারা কল করলে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ফোর্স পৌঁছে যায়। ট্রেনে আমাদের জিআরপির যারা দায়িত্ব পালন করছেন যদি কোথাও কোনো সমস্যা হয় পথে তো বিভিন্ন স্টেশনে আমাদের জিআরপি থানা এবং ফাঁড়ি আছে। তাদেরকে ইনফরমেশন দিলে তো তারা স্টেশন থেকে উঠতে পারছেন। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব জিআরপি পুলিশের। আরএনবির দায়িত্ব হল রেলের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করা। এখন আমাদের জিআরপির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন, কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলোসুবর্ণ এঙপ্রেস, সোনার বাংলা, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর প্রভাতী, পাহাড়িকা, মহানগর গোধূলী, মেঘনা, উদয়ন, এবং বিজয় এঙপ্রেস। এছাড়াও মেইল ট্রেনের মধ্যে চট্টগ্রাম মেইল, কর্ণফুলী, নাসিরাবাদ মেইল ট্রেনগুলোতে এখন রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। আগে আরএনবি সদস্যরাও দায়িত্বে ছিল। এখন আরএনবি সদস্যরা আর ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে না। এখন প্রতিটি ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে জিআরপি পুলিশ।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের যাত্রী ব্যাংকার আসিফ সৈকত আজাদীকে ফোনে বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। গত ১১ বছর ধরে ঢাকাচট্টগ্রাম ট্রেনে করে যাতায়াত করছি। আগে দেখতাম ১ জন পুলিশের সাথে ২/৩জন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বগিতে ঘুরে যেতেন। আজকে প্রায় এক মাসের মতো বগিতে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখছি না। কর্তৃপক্ষের রাত্রিকালীন ভ্রমণে ট্রেনে নিরাপত্তার বিষয়টি বেশ জোর দেয়া দরকার।

মহানগর গোধূলী ট্রেনের যাত্রী সাইফুল আলম বলেন, ট্রেনে সব সময় নানান ঘটনাদুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে পাথর নিক্ষেপ, জানালা খোলা থাকলে মোবাইল ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে সব ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। এই কারণে রাত্রিকালীন ট্রেনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিউজিল্যান্ড পরীক্ষায়ও ফেল বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬