যাঁর ধ্যান-জ্ঞান, স্বপ্ন-কর্ম সবই ছিল জনগণের মঙ্গলের জন্য

রাশেদ রউফ | বৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাল্যকাল থেকেই ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু এবং পরোপকারী। স্কুলে পড়ার সময়েই নেতৃত্বের গুণাবলি ফুটে ওঠে তাঁর মধ্যে। ছাত্রাবস্থায়ই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ক্যারিসমেটিক সেনস অব পলিটিকস বা ক্যারিসমেটিক রাজনীতি বোধের প্রকাশ দেখা যায়। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অধিকার আদায়ের শেষ আশ্রয়স্থল। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ বরেণ্য নেতার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এ বাঙালি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত তিনি বার বার কারারুদ্ধ হন। কখনো জেলে থেকে কখনো বা জেলের বাইরে থেকে তিনি ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্রজনতার চূড়ান্ত আন্দোলনবিদ্রোহে কারান্তরীণ অবস্থায় থেকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮এর আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬২এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬এর ছয় দফা, ’৬৮এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০এর নির্বাচন এবং ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।

বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন কাটিয়েছেন অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে। বিলাসিতার ধারে কাছেও যাননি তিনি। যখন ক্ষমতার শীর্ষে তখনও তিনি বসবাস করেছেন ৩২ নম্বরের একটি সাধারণ বাসায়। আর এ কারণেই দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামবাংলার গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। রাজনীতিবিজ্ঞানীরা বলেন, তাঁর ধ্যানজ্ঞান, স্বপ্নকর্ম সবই ছিল জনগণের মঙ্গলের জন্য। তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল বাঙালির জন্য নিবেদিত। বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে তাঁর লালিত এবং রাজনৈতিক জীবনে রূপায়িত ন্যায়পরায়ণতা। এটাকে বলা যায় রাজনৈতিক ন্যায় সচেতনতা।

তিনি ছিলেন সাহসী, কৌশলী, সৎ, ত্যাগী, ধর্মনিরপেক্ষ, অনলবর্ষী বক্তা ও যোগাযোগকারী, ভিশনারি, মানবিক নেতা। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে তাঁর নেতৃত্ব বিকশিত হয় এইসব অসাধারণ গুণের কারণে। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বের ক্যারিসমেটিক নেতাদের একজন। টাইম ম্যাগাজিনের ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সংখ্যায় বলা হয়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অর্ধশতাব্দীজুড়ে যাঁরা ক্যারিসমেটিক হিসেবে আলোচিত তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জওয়াহেরলাল নেহরু। এই তালিকায় সম্ভবত আরেকটি নাম যোগ হতে যাচ্ছে, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান।’ বিশ্বের খ্যাতনামা এনসাইক্লোপিডিয়াডটকমে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ক্যারিসমেটিক নেতা শেখ মুজিব তৃতীয় বিশ্বে উপনিবেশবিরোধী নেতৃত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।’

তাঁর জীবনাদর্শকে ধারণ করেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। দেশে নানারকম রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে, সেটা থাকতেই পারে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমাদের সর্বসম্মতভাবে তুলে ধরতে হবে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধবানের পানিতে তলিয়ে যাওয়া দুই শিশু ও এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধক্ষতচিহ্ন রেখে নামছে পানি