যমজ যে ভাই-বোন ফিলিস্তিনি আন্দোলনের নতুন মধ্যমণি

| মঙ্গলবার , ৮ জুন, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

গাযায় যুদ্ধবিরতির দু সপ্তাহের মাথায় আবারো ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমে শেখ জারাহ মহল্লায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। উচ্ছেদের হুমকিতে রয়েছে শেখ জারার যে চারটি ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের একটি এল-কুর্দ পরিবার। গত রোববার ইসরায়েলি পুলিশ ঐ বাড়িতে ঢুকে ২৩ বছরের তরুণী মুনা এল কুর্দকে ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে তার ভাই মোহাম্মেদ এল কুর্দ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তারবরণ করেন। খবর বিবিসি বাংলার। কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। মুনা এবং মোহাম্মেদের বাবা নাবিল এল কুর্দ পরে সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ ঘরে ঢুকে পুলিশের তল্লাশি এবং মেয়েকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনি হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কেন বিনা উস্কানিতে মুনা কুর্দকে ইসরায়েলি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়? পুলিশের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমপ্রতি পূর্ব জেরুসালেমে দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় তাকে আটক করা হয়। মুনা বা তার ভাই মোহাম্মেদ নিজেরা শেখ জারাহ বা আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়েছিলেন কিনা বা ছুঁড়তে উৎসাহ দিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত নয়, কিন্তু এই দুই যমজ ফিলিস্তিনি ভাই-বোন এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে শেখ জারাহ থেকে ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন এই দুই ভাই-বোন। রোববার যখন তাদের আটকের খবর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, মুহূর্তের মধ্যে তাদের প্রচুর সমর্থক দলে দলে পূর্ব জেরুজালেমের ঐ পুলিশ স্টেশনের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সে সময় পুলিশের ছোঁড়া স্টান গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ডজন-খানেক ফিলিস্তিনি জখম হয়েছে। গত ক’মাসে তরুণ বয়সী এই দুই ভাই-বোন শেখ জারাহ থেকে উচ্ছেদ ঠেকানোর আন্দোলন এবং সার্বিকভাবে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত দুই মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আন্দোলনে তারা কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা দু’জনই টুইটার এবং ইনস্ট্রগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে খুবই সরব। ইনস্টাগ্রামে মুনার ফলোয়ারের সংখ্যা এখন ১৩ লাখের মত। টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলছেন মার্চ মাসে কিন্তু এরই মধ্যে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৬৪ হাজার। দিনে দিনে সেই সংখ্যা বাড়ছে। টুইটারে তার ভাই মোহাম্মেদের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি। তিন মাস আগে মুনা ‘সেভশেখজারাহ’ (শেখ জারাহকে বাঁচাও) হ্যাশটাগে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ক্যাম্পেইন শুরু করেন সেটাই সারা বিশ্বের ফিলিস্তিনি এবং তাদের সমর্থকদের নজর কাড়ে এবং দ্রুত তা বড় একটি আন্দোলনে দানা বাঁধে। মোহাম্মেদ এই মুহূর্তে জেরুজালেমে থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য নিউইয়র্কে থাকেন তিনি। কিন্তু সেখানে বসেই ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি অনলাইনে এবং মূলধারার মিডিয়াতে নিয়মিত লেখালেখি করেন। বয়স মাত্র ২৩ হরেও সিএনএন, গার্ডিয়ান বা আল জাজিরাসহ প্রথম সারির মিডিয়ায় তার একাধিক সাক্ষাৎকার এবং লেখা প্রচার হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের ইতিহাস নিয়ে লেখা তার একটি বই বর্তমানে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।কথা এবং লেখাতেও খুবই ধারালো এই দুই ভাইবোন। রোববার পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মুনা সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আমাদের ভয় দেখাতে, আতঙ্কিত করতে তারা (ইসরায়েল) যাই করুক না কেন, যতবারই আমাদের গ্রেপ্তার করুক, আমরা ভয় পাইনা। পরপরই ভাই মোহাম্মেদ টুইট করেছেন, আমরা স্বাধীন, মুক্ত। আমাদের ভয় নেই। তারা (ইসরায়েল) কখনই আমাদের আতঙ্কিত করতে পারবে না। তাদের এসব কথা, টুইট হাজার হাজার শেয়ার হচ্ছে। উচ্ছেদের মুখে মুনা-মোহাম্মেদের পরিবার: কিন্তু কেন মুনা এবং মোহাম্মেদ এই বয়সে শেখ জারাহ নিয়ে এতটা তৎপর হয়ে পড়লেন? কারণ, শেখ জারায় যা হচ্ছে তার সরাসরি শিকার হয়ে পড়েছেন তারা এবং তাদের পরিবার। যে চারটি পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আল কুর্দ পরিবার তাদেরই একটি। দু’হাজার নয় সালে তাদের বাড়ির অর্ধেকটা সরকার নিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসী একটি ইহুদি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ নেতানিয়াহুর
পরবর্তী নিবন্ধমুম্বাইয়ে বাড়ির দেয়াল ধসে নিহত ১