চট্টগ্রামে গত কিছুদিন ধরে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় বাঁশখালী, বোয়ালখালী, মহেশখালী এই তিন উপজেলায় দুইজন করে মোট ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বাঁশখালীতে যমজ দুই বোন, বোয়ালখালীতে প্রতিবেশী দুই শিশু কন্যা এবং মহেশখালীতে পৃথক দুই স্থানে দুই শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায়।
দৈনিক আজাদীর বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা এলাকায় পুুকুরে ডুবে যমজ দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হল মোছাম্মৎ রূপসা (৪) ও মোছাম্মৎ রূপসী (৪)। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সবার অগোচরে খেলার ছলে বাড়ির পুকুরে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। রূপসা-রূপসী দুই বোন সরল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াঘাটা নাজির বাপের বাড়ি এলাকার মো. নোমান ও আমেনা বেগম দম্পতির কন্যা। স্থানীয় ও নিকট আত্মীয় মো. আবদুল খালেক জানান, পরিবারের সদস্যরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় রূপসা-রূপসী খেলার ছলে কোন সময় পুকুর পাড়ে চলে আসে ও পড়ে যায় তা কেউ খেয়াল করেনি। একবোন পড়ে গেলে তাকে বাঁচাতে হাত বাড়ালে হয়ত অপর বোনও পুকুরে পড়ে যায়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে তাদের ভাসমান দেহ পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জমজ দুই বোনের এমন করুণ মৃত্যুতে সরল ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এদিকে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দাফন-কাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকাহত পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন, সরল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী, ইউপি সদস্যসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, বোয়ালখালীতে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় প্রিয়া সর্দার (৭) ও মৃত্তিকা সর্দার (৬) নামের একই এলাকার দুই কন্যা শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্দার পাড়ার বড় পুকুর থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করেন স্বজনরা। মারা যাওয়া প্রিয়া ওই এলাকার লেদু সর্দারের ও মৃত্তিকা রঞ্জন সর্দারের মেয়ে। মৃত্তিকা মুক্তকেশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি আর প্রিয়া মন্দির ভিত্তিক পাঠাগারে অধ্যয়নরত ছিল।
জানা গেছে, দুপুরে স্থানীয়রা পুকুরে গোসল করতে গিয়ে দুই শিশুর ভাসমান নিথর দেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে স্বজনরা ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল দে বলেন, শিশুদের পিতা রঞ্জন ও লেদু মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মায়েরা রাস্তার কাজ করেন। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ধারণা করা হচ্ছে একই সঙ্গে গোসল করতে নেমে সাঁতার না জানায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। বোয়ালখালী থানার ওসি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাঁতার না জানায় পানিতে ডুবে এ দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। তারপরও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।
মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীতে গত তিন দিনে পুকুরে ডুবে ৫ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার পৃথক দুই স্থানে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। জানা যায়, গতকাল বিকাল ৩টায় উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির পার্শ্ববর্তী হেফজখানার পুকুরে পড়ে সাড়ে ৩ বছর বয়সী আলভি আহমদ রোজান নামে এক শিশু মারা যায়। সে ওই গ্রামের আজম উদ্দিনের পুত্র। নিহতের পিতা জানান, বাড়ির সকলের অগোচরে খেলতে গিয়ে হেফজখানার পুকুরে পড়ে যায় আমার ছেলে। পরে মাদ্রাসার ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে মহেশখালী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে বিকাল ৩টায় হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ায় বাড়ির পাশের ডোবায় অল্প পানির ছোট গর্তে পড়ে মোহাম্মদ জাহিদ নামের ১৬ মাস বয়সী আরেক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সে উক্ত গ্রামের মোস্তফা কামাল রুবেলের পুত্র। নিহতের পিতা জানান, শিশুটি মায়ের অগোচরে খেলতে গিয়ে বাড়ির পাশের ডোবায় পড়ে মারা যায়।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট বিকালে উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ফকিরা কাটা গ্রামের আবদুর রহিমের কন্যা আনিকা আক্তার (৮) এবং সিরাজুল হকের কন্যা তানিয়া আক্তার (৮) নামের দুই শিশু কন্যা একই সঙ্গে পুকুরে ডুবে মারা যায়। অপরদিকে ২২ আগস্ট দুপুরে একই ইউনিয়নের ফকিরা ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রাওয়াহিনুল রাজ রাহাত (৮) স্কুল ছুটির পর বাড়ি যাওয়ার পথে সহপাঠীদের সাথে পুকুরে গোসল করতে নেমে মারা যায়। এ নিয়ে গত তিনদিনে মহেশখালীতে পুকুরে ডুবে মোট পাঁচ শিশুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।