যথাযথ পদক্ষেপ নিলে হালদা চট্টগ্রামের সম্পদে পরিণত হবে

| শুক্রবার , ৭ জুন, ২০২৪ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের এক কর্মশালায় বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে রাউজান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। হালদা নদীর নাব্যতা হ্রাসে নদী খনন, হালদার সাথে সংযুক্ত শাখা খাল খনন ও শাখা খালের স্লুইস গেইট সংস্কার করা হবে। হালদা নদী ও শাখা খালের মধ্যে কলকারখানা, ডেইরি ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। হালদা পাড়ে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা হ্যাচারিগুলো পুনঃনির্মাণ ও নতুনভাবে আরো হ্যাচারি নির্মাণ করতে হবে। হালদা পাড়ের বাসিন্দা, জেলে ও মৎসজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তাদেরকে গরু ক্রয় করে দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মশালায় বক্তারা বলেন, হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সকলের সহায়তা পেলে হালদার পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সক্ষম হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, হালদা নদী বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নদী এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হালদার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হালদাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই হেরিটেজের গুণগত মান, ঐতিহ্যগত অবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিবেশ সবকিছু আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। এর স্বতন্ত্র অবস্থা যেন বিনষ্ট না হয়, এখানে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ও দূষণ না হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে। তাঁরা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছিলেন মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। সরকার বঙ্গবন্ধুর এই দূরদৃষ্টি বাস্তবায়ন করতে চায়। বাংলাদেশের মাছ উৎপাদন বিশ্বের কাছে এখন বিস্ময়। ইলিশ আহরণ, তেলাপিয়া উৎপাদন, স্বাদু পানি ও বদ্ধ পানির মাছ উৎপাদনে আমরা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। মৎস্য খাতে আমরা গতানুগতিক পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এ খাতে গবেষণাভিত্তিক প্রকল্প নিতে হবে, অঞ্চলভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

নদী বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে হালদা নদী বাংলাদেশের অদ্বিতীয় নদী। এখান থেকে সরাসরি মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। যুগ যুগ ধরে স্থানীয় অধিবাসীরা মাছের ডিম সংগ্রহ করে নিজস্ব পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদন করে দেশের মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। কিন্তু নানামুখী দূষণ এবং কৃত্রিম নানা আয়োজনে হালদায় মা মাছের স্বাভাবিক চলাচল এবং ডিম ছাড়ার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হুমকির মুখে পড়ছে। অবশ্য এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও দায়ী করা হয়। তাঁরা জানান, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দেশে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি করা হয়েছে, পরীক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অবৈধ জাল ব্যবহার করে অথবা বিষ প্রয়োগ করে যারা দেশের মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর বলে আমরা জানি। বলা জরুরি যে, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য মাছের চাহিদা পূরণের প্রধান ভূমিকা রেখে যাচ্ছে হালদা নদী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই নদীকে রাজনৈতিকভাবে একশ্রেণির নদী খেকোরা দখল করে নিচ্ছে। নদীর দুইপাড় যেভাবে দখল হচ্ছে তেমনি পুরো চট্টগ্রামের ময়লা আবর্জনা মলমূত্র এবং পলিথিনে জমাটবদ্ধ হয়ে নদীর তলদেশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তাই হালদাকে বাঁচাতে চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

আজাদীতে ইতোপূর্বে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে এর গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। মা মাছ ও ডলফিন রক্ষায় নদীর পাড়ে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি। তবুও মাছে, ফসলে কিংবা বাণিজ্যে চট্টগ্রামের গর্ব হালদা নদী ক্রমে ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে। একশ বছর ধরে নানা অত্যাচার সয়ে টিকে আছে হালদা। বহু বছর ধরে চট্টগ্রামের মৎস্যক্ষেত্রে অবদান রাখা নদীটি তার বৈশিষ্ট্য হারাতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এই নদী চট্টগ্রামের সম্পদে পরিণত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬