স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইনে উৎপন্ন বর্জ্য উৎপত্তিস্থল থেকে গৃহস্থালী, প্লাস্টিক, ধাতব এ তিন ভাগে ভাগ করে অপসারণ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনসমূহে এই নির্দেশনা পালন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মনে করে জনবল সংকট ও আর্থিক সাশ্রয় বিবেচনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও আধুনিকীকরণে আউটসোর্সিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম নগরকে নান্দনিক, বসবাসোপযোগী, গ্রিন সিটি হিসেবে রূপান্তর করতে হলে পর্যায়ক্রমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও আধুনিকায়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে মান্ধাতার আমলের প্রক্রিয়াগুলোর পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সেই আলোকে সম্প্রতি চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা চেয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গত ৫ ডিসেম্বর টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং–সিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ সহায়তা চান মেয়র। সাক্ষাৎকালে মেয়র শাহাদাত বলেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ২০০০ থেকে ২৫০০ টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এ বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা সিটি কর্পোরেশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ বর্জ্যের কারণে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় বন্দরনগরী। এছাড়া, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ পলিথিন ও প্লাস্টিকে ঢেকে গেছে। এতে নাব্য হারানোর পাশাপাশি দূষণের কবলে হুমকির মুখে পড়েছে নদীটি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দেশের একাধিক প্রস্তাব থাকলেও প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন পরিবেশসম্মত কী না তা নিশ্চিত হতে চাই। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দক্ষিণ কোরিয়া চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি সামগ্রিক সমাধান প্রদান করতে পারে যার আওতায় বর্জ্য সংগ্রহ থেকে রিসাইক্লিং এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের পথরেখা থাকবে। আমার স্বপ্ন আমি জনগণকে সাথে নিয়ে ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি চট্টগ্রাম গড়ব। চট্টগ্রামকে ঠিকভাবে ঢেলে সাজালে নদী–সমুদ্র–পাহাড়বেষ্টিত চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থান করা সম্ভব।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘৭০ লাখ বাসিন্দার চট্টগ্রাম নগরে বছরে বর্জ্য উৎপাদন হয় ১৯ লাখ টন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বর্জ্য সংগ্রহ করে মাত্র ৯ লাখ টন। বাকি ১০ লাখ টন বর্জ্য খাল–নালা ও নদীতে পড়ছে। নগরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে সংগ্রহ করতে না পারা বিশাল পরিমাণ বর্জ্যকে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ বর্জ্য সংগ্রহ করলেও ব্যবস্থাপনায় কোনো উদ্যোগ নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা না আনলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন চার প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারের তিন সংস্থা। এর মধ্যে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। প্রকল্পটির অধীনে নগরের ৩৬টি খাল পরিষ্কার ও সংস্কার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিটি করপোরেশনের সংগ্রহের বাইরে থাকা প্রতি বছর উৎপাদিত ১০ লাখ টন বর্জ্য। এসব বর্জ্য গিয়ে পড়ছে খালে। পরিষ্কারের পরদিনই বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল। ফলে প্রকল্পের তিন ভাগ কাজ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা নিরসন দৃশ্যমান হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধ এবং নির্ধারিত সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে নগরের বাসিন্দাদের বর্জ্য ফেলা নিশ্চিত করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে সিটি করপোরেশনের। নয়তো জলাবদ্ধতার নিরসনের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও অর্থের অপচয় ছাড়া কোনো কাজে আসবে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্জ্য সংগ্রহের যে ব্যবস্থা রয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। ন্যূনতম যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতেও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত না করার কারণে শৃঙ্খলা আনা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নগরবাসীর বর্জ্য ফেলা নিশ্চিত করতে হবে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধে জরিমানা ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে।