নগরীতে সড়ক দখল করে দোকানপাট, ভ্রাম্যমাণ হাট বসানো এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এ যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। অপরদিকে রাস্তা দখলের কারণে বাধ্য হয়ে গাড়ি রাস্তার মাঝখানে সড়ক বিভাজক ঘেষে চলাচল করছে। ফলে পথচারীরা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
নগরের অন্যতম ব্যস্ততম স্থান নিউ মার্কেট এলাকা। নগরের সব দিক থেকে সড়ক এসে এখানে যুক্ত হয়েছে। এতে সরেজমিনে দেখা যায়, জহুর হকার্স মার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার মাঝের সড়কটির প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ জুতা, গার্মেন্টস সামগ্রী ও খাবারের দোকানপাট। তিন লেনের এই সড়কের দুই লেনেই দোকান বসিয়ে এবং গাড়ি রেখে দখল করা হয়েছে। মাত্র একটি লেনে চলছে গাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে এটি কোনো হাট–বাজার। এছাড়া সড়কের মাঝখানে ভ্রাম্যমাণ ওষুধ বিক্রেতারা মাইক্রো বাস বসিয়ে হাত মাইক বাজিয়ে ওষুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে সড়কটিতে দীর্ঘ যানজট লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া কদমতলী থেকে যে সড়কটি নিউ মার্কেট এলাকায় যুক্ত হয়েছে, সেটিতেও অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে মোটরসাইকেল, সিএনজি রাখা হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ দোকান তো আছেই। নিউ মার্কেট এলাকায় এরকম সব কটি সড়ক দখল করে দোকানপাট ও যত্রতত্র পার্কিং করতে দেখা গেছে। একই চিত্র নগরের আন্দরকিল্লা, চকবাজার, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ এলাকা ও মুরাদপুরসহ নগরীর প্রায় সব কটি ব্যস্ততম এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কের মোড় দখল করে ভ্যানগাড়ি নিয়ে নানা জিনিস বিক্রি করছে খুদে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বিআরটি–এর অনুমোদিত গাড়ির পাশাপাশি মহানগরীর সড়কসমূহে অবাধে চলছে অনুমোদনহীন টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, শত শত লাইসেন্সবিহীন রিকশা। অবৈধ এসব গাড়ি সংশ্লিষ্টদের প্রভাবশালী ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন, ওয়াসা ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়ি এবং নগরীর বিভিন্ন সড়ক দখল করে ইট–বালি, নির্মাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখায় জনভোগান্তি বেড়েছে চরমে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নগরীতে স্থায়ী গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশে রাখা হচ্ছে সারি সারি গাড়ি। আবার স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার জন্য গাড়ির ভিড়েও অনেক এলাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নগরীর জামাল খান, বাওয়া স্কুল, চিটাগাং গ্রামার স্কুল, সানশাইন গ্রামার স্কুল, পাথরঘাটা সেন্টপ্লাসিড স্কুলসহ নামকরা সব স্কুলের আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট হচ্ছে স্কুল শুরু ও ছুটির সময়। এছাড়া স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তার দুইপাশ, তিনপোলের মাথা, আমতল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সারি সারি গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে।
জানা যায়, সড়ক ও রাস্তাঘাট দখল করে বাস রাখা হচ্ছে। সড়কের পাশে টিকিট কাউন্টার। সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে দূরপাল্লার বাসের যাত্রী উঠা–নামা করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর নগরীর কদমতলী, দামপাড়া, স্টেশন রোড, বড়পুল, সরাইপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দূরপাল্লার বাস এনে রাখা হয় রাস্তায়। বাসের সারির কারণে এসব এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া নগরীতে যেখানে সেখানে সড়ক দখল করে রাস্তায় রাখা হচ্ছে ইট, বালি, কংকরসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণ সামগ্রী। রাস্তা দখল হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। নগরীতে এমন যানজট থেকে বাঁচতে নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে পে–পার্কিং (টাকার বিনিময়ে গাড়ি রাখা) চালু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। গত ৩০ জুন তৎকালীন চসিক মেয়র রেজাউল করিম এটি উদ্বোধন করেন। এ পার্কিংয়ে ঘণ্টা প্রতি দুই চাকার গাড়ি ১৫ টাকা এবং তিন ও চার চাকার গাড়ি ৩০ টাকা দিয়ে তাদের গাড়ি রাখতে পারবে। তবে সঠিক তদারকির জন্য অভাবে এই উদ্যোগ তেমন সফল হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে গত রোববার থেকে নগরীতে চলাচলকারী অবৈধ সিএনজিচালিত টেঙিসহ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগরীতে চলাচলকারী ‘গ্রাম’ সিএনজি, রুট পারমিটবিহীন সিএনজি ও অবৈধভাবে ভাড়ায়চালিত প্রাইভেট সিএনজির বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে।
ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই নিয়ম মানতে চান না। বললে আরও উল্টা তর্কে জড়ায়। ব্যাপক হারে অনিয়ম হওয়ায় ট্রাফিকের দায়িত্বরতরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হয়।
এই ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সিএমপির ডিসি (ট্রাফিক–পশ্চিম) মো. তারেক আহম্মেদ আজাদীকে বলেন, সড়ক দখল নিয়ে আমাদের অভিযান এখনো শুরু হয়নি। এখন আমাদের অবৈধ সিএনজি, রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। প্রতিদিন এটা নিয়ে অভিযান হচ্ছে। সড়ক দখল ও যত্রতত্র পার্কিং নিয়ে ক্রমান্বয়ে অভিযানে যাব। আশা করি শীঘ্রই আমরা সেটা শুরু করতে পারবো।