যত্নে থাকুক শৈশবের স্মৃতিগুলো

হৈমন্তী তালুকদার | বুধবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

ইচ্ছে করে মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে শৈশবের স্মৃতিময় সময়ে আবারও ঘুরে আসি, মনে হয় এইতো সেইদিনের কথা, বিকেল বেলা মা, পিসীরা বারান্দায় বসে লাল সাদা ফিতে দিয়ে আমাদের দু’বেনী করে দিতো চুলের। আমরা যেন মহাখুশি হয়ে হাতে মুড়ি বা চিড়ার মোয়া নিয়ে পাড়ার সামনের উঠোনে খেলতে চলে যেতাম, কতো কী খেলার আয়োজন, একজন দক্ষ খেলোয়াড় দাদা বা দিদি সবাইকে নির্দেশনা দিতো। চি বুড়ি খেলায় চি বলে দম নিয়ে অপর পক্ষের খেলোয়াড়দের ছুঁয়ে বুড়িকে বুদ্ধি করে নিয়ে আসলেই বাজিমাত, সত্যি কতো কী খেলতাম আমরা, রুমালচুরি খেলাটাও ভীষণ মনে পড়ে। নানা রঙের ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে ওড়াতো পাড়ার দাদারা, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। শীতের সকালে বাড়ির পিছনে শিউলি ফুলের গন্ধে ভরে থাকতো, পাড়ার সকলে যেন ফুল কুড়ানোর ধুম পড়ে যেতো কার আগে কে উঠবে। ফুল কুড়িয়ে ফুলের সাজিতে ভরে মালা গাঁথতাম সেই আনন্দ আর ফিরে আসবে না। বার্ষিক পরীক্ষার পর চড়ুইভাতি খাওয়ার আনন্দ ছিলো সীমাহীন, চাল, ডাল, ডিম নিজের ঘর থেকে সাথে বিশ কী পঞ্চাশ টাকা তাতেই হতো মজার চড়ুইভাতি। পাড়ার জেঠিমা বা ঠাকুরমা রান্না করে দিতেন আর আমরা চুলার চারপাশে আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম। আমাদের সময় স্যাটেলাইট ছিলো না, বাঁশের মাথায় এক ধরনের এন্টেনায় তার লাগিয়ে বিটিভি দেখতাম আমরা, কখনো বৃষ্টি বা ঝড় হলেই টিভিতে ঝিরঝির করতো একধরনের দাগ পড়তো, বাইরে একজন বাঁশ ঘুরিয়ে বলতো ছবি পরিষ্কার আসছে? ভেতর থেকে বলতো হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে। সেই স্মৃতিগুলোও মনে ভাসে। আজকাল টিভি খুললেই সারাদিনের কতো চ্যানেলে কতো কী আয়োজন। রাত আটটার সংবাদের পর কোনো কোনোদিন পছন্দের সিরিয়াল দেখার অনুমতি মিলতো, টিপু সুলতান প্রচার হতো রবিবার, আরো কিছু ফেবারিট সিরিজ ছিলো এরাবিয়ান নাইটস, আলী বাবা চল্লিশ চোর, এইসব মজার ও কাল্পনিক ঘটনাগুলো দেখার জন্য মন দিয়ে পড়া শেষ করতাম, তারপর অনুমতি পেতাম। আমাদের শৈশবের সময়টাতে এতো আধুনিকতা ছিলোনা ঠিক আমাদের জীবনে আনন্দের কোন সীমা ছিলো না। আমাদের শৈশবগুলো ছিলো সহজ সরল নান্দনিক আয়োজনে ভরপুর। মানুষের সাথে মেলামেশার একটা সুন্দর আন্তরিক সুযোগ আমরা পেয়েছি। শৈশবের স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলো যত্নে লালিত হোক আজীবন। ভালো থাকুক শৈশবের সকল প্রিয় মুখগুলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাণিজ্যিক রাজধানী- জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধসিআরবিতে নয় আইস ফ্যাক্টরি রোডে হোক হাসপাতাল