শব্দের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও পোকামাকড় যে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছেন তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাদের এ গবেষণার মাধ্যমে প্রকৃতিতে ধ্বনিগত যোগাযোগের এক নতুন দ্বার মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। জার্নাল ই–লাইফে প্রকাশিত তাদের গবেষণা পত্রে দেওয়া ধারণা অনুযায়ী, স্ত্রী মথ শুকিয়ে যাওয়া টমেটো গাছ থেকে নির্গত আল্ট্রাসনিক (মানুষের শ্রবণসীমার ঊর্ধ্বে যে শব্দ) সঙ্কেত শনাক্ত করতে পারে এবং এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোথায় ডিম পাড়বে তা ঠিক করে। মথরা সাধারণত টমেটো গাছেই ডিম পাড়ে, যেন লার্ভা বেরিয়ে আসার পর সহজে খাবার পায়। খবর বিডিনিউজের।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন রিয়া সেলৎজার ও গাই জের এশেল, তারা কাজ করেছেন তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইজ ফ্যাকাল্টি অব লাইফ সায়েন্সের দুই অধ্যাপক ইয়োসি ইয়োভেল ও লিলাখ হাদানির গবেষণাগারে। ‘একটি উদ্ভিদ ও একটি পোকার মধ্যে প্রাকৃতিক ধ্বনিগত যোগাযোগের প্রথম প্রমাণ উদ্ঘাটন করেছি আমরা, মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন তারা। দলটি তাদের পুরনো গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই নতুন এ ধ্বনি যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে। এর আগে একই গবেষকরা বের করেছিলেন, চাপে থাকলে উদ্ভিদদের থেকে আল্ট্রাসনিক শব্দ নির্গত হয়। তাদের এ আবিষ্কার কৃষি ও কীট নিয়ন্ত্রণে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে; শব্দের মাধ্যমে শস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও পোকামাকড়ের আচরণ নিয়ে প্রভূত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
উদ্ভিদ থেকে নির্গত হওয়া আল্ট্রাসনিক শব্দ মানুষ শুনতে না পেলেও অনেক পোকামাকড় এবং বাদুড়ের মতো অনেক স্তন্যপায়ীই তা শনাক্ত করতে পারে। এই শব্দের প্রভাব বের করতে গবেষকরা স্ত্রী মথদের সামনে দুটি সুস্থ টমেটো গাছ রাখেন, যার একটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া একটি স্পিকার, যা আগে থেকে রেকর্ড করে রাখা শুকনো গাছের আল্ট্রাসনিক শব্দ নির্গত করতে থাকে। অন্য টমেটো গাছটি ছিল একেবারেই শব্দহীন।
দেখা গেল, মথরা ওই শব্দহীন গাছকেই বেছে নিয়েছে। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, ডিম পাড়ার উপযুক্ত স্থান বেছে নিতে তারা এ শব্দ সঙ্কেতকে কাজে লাগায়। মথদের ওই পছন্দ যে শব্দ দ্বারাই সুনির্দিষ্ট এবং তাও যে–সে শব্দ নয়, উদ্ভিদ থেকে আসা শব্দই হতে হবে, তা পরে আরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়। ‘এখানে আমরা দেখেছি যে প্রাণীরা এসব শব্দ বুঝতে সক্ষম। এটাকে শুরু বলেই মনে হচ্ছে আমাদের। অনেক প্রাণীই হয়তো ভিন্ন ভিন্ন উদ্ভিদের ডাকে সাড়া দেয়, বলেছেন হাদানি।