যক্ষার মেশিনে করোনা শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের বেশি!

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২০ at ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ

গত ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম। এই জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে মূলত যক্ষার কফ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিউবারকুলোসিস রেফারেল ল্যাবরেটরি-তে (আরটিআরএল) এই জিন এক্সপার্ট মেশিনে করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কম সময়ে ফল জানার সুবিধা এবং সঠিকতার হার তুলনামূলক বেশি, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই মেশিনে করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন- জিন এক্সপার্ট মেশিনে মাত্র ৪৫ মিনিটে করোনা পরীক্ষার ফল জানা যায়।
এদিকে, সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হলেও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মেশিনটির মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা চালু হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। চালুর পর থেকে গত বুধবার (১৪ অক্টোবর) পর্যন্ত মোট ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এই মেশিনে। পরীক্ষাকৃত এসব নমুনার মধ্যে ১৪ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। হিসেবে ৪০ শতাংশের বেশি (৪২.৪২ শতাংশ) নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এই মেশিনে। অথচ একই সময়ে বিআইটিআইডি ও চমেক ল্যাবে করোনা শনাক্তের হার ৯ শতাংশের কম। এসব ল্যাবে আরটিপিসিআর মেশিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
যক্ষার মেশিনে করোনা শনাক্তের হার বেশি স্বীকার করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, জেনারেল হাসপাতালের ওই ল্যাবে অধিকাংশই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নমুনাই বেশি পরীক্ষা হচ্ছে, সেহেতু এখানে করোনা শনাক্তের হারও একটু বেশি। এরপরও শনাক্তের হার বেশি আসার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, প্রয়োজনে এখানে পরীক্ষাকৃত কিছু নমুনা পুনরায় পরীক্ষার (রি-টেস্ট) জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী-জেনারেল হাসপাতালের জিন এঙপার্ট মেশিনে প্রথম দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) ৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এতে ৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। হিসেবে প্রথমদিন ৭৫ শতাংশ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয় এই মেশিনে। পরদিন (২৯ সেপ্টেম্বর) ১টি নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের (শতভাগ) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। ১ অক্টোবর ৮টি নমুনা পরীক্ষা হয় এই ল্যাবরেটরিতে। যা ল্যাবটিতে এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা। এর মধ্যে ২ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। সবমিলিয়ে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এই ল্যাবে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪টি নমুনায়। হিসেবে পরীক্ষাকৃত নমুনায় করোনা শনাক্তের হার ৪২.৪২ শতাংশ।
অন্যদিকে, একই সময়ে (২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর) বিআইটিআইডি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ২১৫টি। এর মধ্যে ২০৮টি নমুনায় করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। হিসেবে পরীক্ষাকৃত নমুনার মধ্যে মাত্র ৩.৯৮ শতাংশ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে বিআইটিআইডি ল্যাবে। আর একই সময়ে চমেক ল্যাবে করোনা শনাক্তের এই হার ৮ শতাংশের কিছু বেশি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে- ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা হয় চমেক ল্যাবে। এর মধ্যে ৩৬৮টি নমুনায় করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। হিসেবে পরীক্ষাকৃত নমুনার ৮.৬৩ শতাংশে করোনা শনাক্ত হয়েছে চমেক ল্যাবে।
প্রসঙ্গত, শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৮৮৩ জনের। পরীক্ষাকৃত নমুনার মধ্যে করোনা শনাক্তের হার ১৭ শতাংশ। আক্রান্তদের মাঝে ১৪ অক্টোবর (বুধবার) পর্যন্ত ৩০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১৫ হাজার ৬৭২ জন সুস্থ হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেয়ারে বসা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীকে ছুরিকাঘাত, মামলা
পরবর্তী নিবন্ধবিমানের সিটের নিচে সাড়ে ১১ কোটি টাকার স্বর্ণ