ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

| রবিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

গত ২৫ এপ্রিল দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসকরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল : ‘আমরাই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল : নব উদ্যমে, নব বিনিয়োগে ও নব চিন্তায়’। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পার্বত্য দুই জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান। মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯০ শতাংশই এ দুই জেলায়। এর মধ্যে বান্দরবানে মোট রোগীর ৫৯ শতাংশ ও রাঙ্গামাটিতে ২৯ শতাংশ। সীমান্তবর্তী দুই দেশের মানুষের মেলামেশা, ব্যবসাবাণিজ্য, জুমচাষ ও শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দাদের চলাফেরার কারণে কোনোভাবেই এ দুই জেলায় ম্যালেরিয়া কমানো যাচ্ছে না। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদিও বলছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫১ জেলায় ম্যালেরিয়া ছিল না। বাকি ১৩ জেলার মধ্যে সংক্রমণ ছিল। এর মধ্যে ৪ জেলা ম্যালেরিয়ামুক্ত হয়েছে। বাকি ৯ জেলায় এখনো রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৭ জেলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ২ জেলায় রোগী নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনো ১৩ জেলায় ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ১১ জেলায় মোট রোগীর মাত্র ১০ শতাংশ রয়েছে। ফলে অধিদপ্তর এই ১১ জেলা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছে।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯২ শতাংশ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২৪ সালে ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩ জেলার মোট রোগীর ৫৯ শতাংশই ছিল বান্দরবানে ও ২৯ শতাংশ ছিল রাঙ্গামাটিতে। এরপর খাগড়াছড়িতে ৪ শতাংশ ও কঙবাজারে ৩ শতাংশ রোগী ছিল। চট্টগ্রামে ছিল মোট রোগীর শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। বাকি আট জেলায় ছিল মোট রোগীর শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

২০২১ সালে বান্দরবানে ছিল মোট রোগীর ৭২ শতাংশ। সেটি ২০২৩ সালে এসে দাঁড়ায় ৬০ শতাংশে। কিন্তু ২০২৪ সালে তা সামান্য কমে ৫৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে রোগী বাড়ছে। রাঙ্গামাটিতে ২০২১ সালে রোগী ছিল মোট রোগীর ২১ শতাংশ। সেটি এখন আরও বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। গত ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর ১ শতাংশ বেড়েছে। খাগড়াছড়িতে ২০২১ সালে রোগী ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৪ শতাংশ হয়েছে। গত ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণ। সে বছর রোগী ছিল ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। কক্সবাজারে খুবই ধীরগতিতে কমছে। বর্তমানে এখানে রোগী মোট রোগীর ৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে ছিল ৮ শতাংশ। ২০২১ সালে এই জেলায় রোগী ছিল ৫ শতাংশ। চট্টগ্রামের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। গত তিন বছর ধরে এখানে রোগী শূন্য দশমিক ৮ শতাংশের ঘরে ওঠানামা করছে। ২০২১ সালে রোগী ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ম্যালেরিয়া রোগের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে রোগীর সংখ্যা কমে আসার পাাশাপাশি এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক কমেছে। ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ,প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতাসহ কর্মতৎপরতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় একসময় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি ছিল। দুর্গম এলাকা হওয়াতে ম্যালেরিয়া রোগে শিশুরা মারাও যেত। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতায় এখন পাহাড়ে ম্যালেরিয়া রোগী কমে আসছে। সরকার আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

নগরীতে মশার উপদ্রব সহনীয় রাখতে ও মশার বংশবিস্তার রোধে বদ্ধ জলাশয় ও নর্দমা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সচেতনতামূলক কর্মসূচিসহ যেসব কার্যক্রম চলমান রাখা প্রয়োজন, বর্তমানে সিটি করপোরেশন সেই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারছে বলে মনে হয় না। ফলে নগরীতে দেখা দিয়েছে মশার দৌরাত্ম্য। যদিও পরিচ্ছন্ন ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অবহেলা করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত।

সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকর্মচারীরা বলছেন, মশা নিধনের জন্য নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। বলা যায়, মূলত দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার সুযোগে শহরে আবারও বেড়েছে মশার যন্ত্রণা।

বিশেষজ্ঞরা জনসচেতনতার বিষয়টিকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবছেন। নগরবাসী যদি তাদের নিজ নিজ বাসস্থান ও আশপাশ এলাকা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখে এবং মশা জন্মানোর ও এর বংশ বিস্তারের সুযোগ না দেয়, তাহলে মশার উপদ্রব থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে