মোড়ক উন্মোচনের সৌন্দর্য একটি বই একজন বন্ধুর সমান : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

বুকের রক্তকে কালো কালিতে রূপ দেন লেখক, কবি বা সাহিত্যিক। ছাপার হরফে তা পৌঁছে পাঠকের কাছে। এর আগে তা রূপ নেয় বই বা গ্রন্থে। লেখকের ভাষায়, এ গ্রন্থ সন্তানতুল্য। সন্তান আগমনের খবরে উচ্ছ্বসিত থাকেন পিতা। লেখকও তাই। জনক পৃথিবীর আলো দেখা তার সন্তানের খবর জানান দেন

 

সবাইকে, ভাগ করেন আনন্দ। লেখকও তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ হাতে পেয়ে ভাসেন আনন্দস্রোতে। মোড়ক উন্মোচন বা পাঠ উন্মোচনের মাধ্যমে সে আনন্দ ভাগ করেন পাঠকের সঙ্গে। নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে বইমেলা। মেলা শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিন নতুন বইয়ের

মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে প্রকাশনা স্টল অথবা নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে। সর্বশেষ গতকাল দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মোড়ক উন্মোচন করেন শিশুসাহিত্যিক শুকলাল দাশের কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘আনন্দপুরের দিন’ এর।

এ সময় দৈনিক আজাদী সম্পাদক বই পড়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একটি বই একজন বন্ধুর সমান। একটি ভালো বই একটি লাইব্রেরির সমান। এর আগেও বলেছি, আজ আবারও বলবমোবাইল নয়, বই হোক নিত্যসঙ্গী। বই পড়ে যা জানা যায় তা অন্য কিছুতে হয় না। একটা বই অনেক কথা বলে। একজন লেখক তার জীবনের অনেক বিচিত্র ঘটনা নিয়ে লিখেন। এর মধ্যে যা কিছু ভালো তার পরম্পরা থেকে যায়।

তিনি বলেন, আমার ধারণা ছিল রোহিঙ্গারা বোধহয় উদ্বাস্তু। কিন্তু আমার সে ধারণা পাল্টে যায় অমর্ত্য সেনের জীবনী পড়ে। এ বই থেকে জানতে পারলাম রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু নয়। সেটা তাদের স্বভূমি। ব্রিটিশরা যখন বার্মা ছেড়ে যায় তখন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল বার্মাকে দিয়ে চলে যায়। এইযে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে আছে তা বই না পড়লে জানা যেত না।

তিনি বলেন, আমাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বই জানার এবং জ্ঞানের শক্তি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। আমরা যত বেশ পড়ব তত বেশি জ্ঞানী হব। যত বই পড়বেন তত ভালো কিছু চিন্তা করার শক্তি অর্জিত হবে। বই কখনো মিথ্যা বলে না।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি রাশেদ রউফ এর সঞ্চালনায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, বাংলা বইমেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, সাহিত্যিক ড. আনোয়ারা আলম, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান

আকবর, বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকমের ডেপুটি এডিটর তপন চক্রবর্তী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, আনন্দপুরের দিন এর লেখক শুকলাল দাশ।

উপস্থিত ছিলেন লেখক অধ্যাপক এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরা, শিশুসাহিত্যিক অরুণ শীল, শিশুসাহিত্যিক অমিত বড়ুয়া, প্রাবন্ধিক নেছার উদ্দিন আহমেদ, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু, গল্পকার ইফতেখার মারুফ, শিশুসাহিত্যিক জসীম উদ্দীন খান, গল্পকার রুনা তাসনিমা, কবি শারুদ নিজাম, কবি লিপি বড়ুয়া, কণ্ঠশিল্পী রায় নন্দী, কবি ও সাংবাদিক আরিফ রায়হান, শিশুসাহিত্যিক লিটন কুমার চৌধুরী, শিশুসাহিত্যিক সৈয়দা সেলিনা

আকতার, কবি আবু মুসা চৌধুরী, সংগঠক আর কে রুবেল, ছড়াকার নিশাত হাসিনা শিরিন এবং চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাবের সাবেক সভাপতি জিনাত আজম।

উল্লেখ্য বইমেলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যেসব গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এজাজ ইউসুফীর ‘মধুব্রত অধুনা নগরে’, ‘গুণীর দীপ্র কথকতা’ ও ‘আমার সকল কথা’, তানভীর শাহরিয়ার রিমন এর ‘লাঙারি ট্র্যাপ’, ‘বিচিত্রা সেনের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘জাগিয়া উঠিল প্রাণ’ চাঁদ সুলতানা নকশীর কাব্যগ্রন্থ ‘মিলনান্ত নীল’, আহমেদ কুতুব এর ‘কারাগারের অন্দরমহল’, আবু মোশাররফ রাসেল এর ‘মায়াভবন’,

নতুন বইয়ের খবর :

নতুন প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেইউসুফ মুহম্মদ এর ‘শূন্যসূত্র’, শাহিদ হাসান এর ‘শিরায় শিরায় অনুনাদ’, জুনাইদ আমিন চৌধুরী এর ‘দ্রোহ দহন দ্বিধার অনুধ্যান’ এবং হাবিব আহসানের ‘ধানফোটা খই’।

শূন্যসূত্র এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, ‘শূন্যসূত্র’ কাব্যগ্রন্থের বিশেষত্ব এখানেইএটি ত্রয়ী কাব্য। অর্থাৎ তিনে মিলে একতিনভুবনের বোধের জীবন : ‘শব্দ পুড়ে ছাই’, ‘টিনের আয়না’ আর ‘৪৯ বায়ু’ ৷ ‘শূন্যসূত্র’ কাব্যে একজন কবিবার্ণিকের আশ্চর্য প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাসার বাণী আছেআমাদের জন্য, পাঠক ও বিশ্বমানবের

জন্য : ‘কেউ জেগে আছো? শব্দ করছো না কেন?’ এ প্রশ্ন কী আমাদের চকিত করে নাটনটন করে না আমাদের হৃদয়!

শিরায় শিরায় অনুনাদ’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, অতীত ও বর্তমান সময়ের দৈশিক ও বৈশ্বিক সংকটের রূপরেখা হচ্ছে ‘শিরায় শিরায় অনুনাদ’। বিষয়গুলো নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন কবি।

দ্রোহ দহন দ্বিধার অনুধ্যান’ এর ফ্ল্যাপে লেখা আছে, সমাজে চলমান বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা যেমন এই সংবেদনশীল কবিকে বিচলিত করে, তেমনি ভালোবাসা, প্রেম, বিরহ, অনুরাগে আলোড়িতসে সব উপাখ্যানের প্রতিফলন নিয়ে ‘দ্রোহ দহন দ্বিধার অনুধ্যান’।

হাবিব আহসানের ‘ধানফোটা খই’ নিয়ে হাফিজ রশিদ খানের মূল্যায়ন হচ্ছেজীবন ও কবিতা যে একই রেশমি বস্ত্রের এপাড়ওপাড় আর ভারি জৌলুশময়কান্নাচাপাবেদনাহরাহাবিব আহসানের কবিতা সে কথা বারবার জানান দেয়। প্রাণঘষা জ্বালা প্রেম গার্হস্থ্য বন্ধুতা আর প্রতাপশালী সমঝোতা কবিতাগুলোকে নহলি জলধারার লাবণ্য দিয়েছেঠিক ঘোর বরিষণে কুঞ্জছায়ার নিচ দিয়ে কলকল শব্দে বয়ে যাওয়া ছরার চলন শব্দের মতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি গণতন্ত্রের পথে প্রতিবন্ধকতা : তথ্যমন্ত্রী