মোহাম্মদ রফি (১৯২৪–১৯৮০)। কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী। উপমহাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগীত ব্যক্তিত্ব। মোহাম্মদ রফির জন্ম ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবের কোটলা সুলতান সিং গ্রামে। তাঁর পিতার নাম হাজি আলি মোহাম্মদ। রফির ডাকনাম ছিল ‘ফিকু’। রফির বড় ভাইয়ের বন্ধু ছিলেন আবদুল হামিদ নামে একজন। কিশোর রফির গান তাঁকে আলোড়িত করেছিল। তাঁরই অনুপ্রেরণায় গান শিখতে শুরু করেন মোহাম্মদ রফি। ওস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবন লাল মাট্টু এবং ফিরোজ নিজামীর কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন রফি। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দেই প্রথমবারের মতো নওশাদের সংগীত পরিচালনায় গান করেন রফি। ‘পাহেলে আপ’ ছবির জন্য ‘হিন্দুস্থান কে হাম হায়’ গানটি গান তিনি। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় নওশাদ–রফির পথচলা। এই জুটি উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব গান। ‘লায়লা মজনু’, ‘শাহজাহান’, ‘জুগনু’, ‘কাশ্মীর কি কলি’–একের পর এক ছবিতে গান করেন রফি। হিন্দিসহ কোনকানি, উর্দু, ভোজপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবী, বাংলা, মারাঠী, সিন্ধি, কানাড়া, গুজরাতি, তেলেগু, মাঘী, মৈথিলী, অহমীয়া ইত্যাদি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। এছাড়াও গান গেয়েছেন – ইংরেজি, ফার্সী, স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষায়। প্রায় চল্লিশ বছর সময়কাল ধরে সঙ্গীত জগতে থাকাকালীন তিনি ছাব্বিশ হাজারেরও অধিক চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্য গায়ক হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মোহাম্মদ রফি। সঙ্গীত ভুবনে সুদীর্ঘ চার দশক সময়কাল অতিবাহিত করেন তিনি। সঙ্গীত কলায় অসামান্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় পদক এবং ৬–বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মোহাম্মদ রফি। এছাড়াও তিনি ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মানেও অভিষিক্ত হয়েছেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সেরা গায়ক হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফি। বাংলাভাষাতেও বেশ কিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে। ‘ওরে মনকে এমন দাগা দিয়ে’, ‘ওই দূর দিগন্ত পারে’, ‘নাই বা পরিলে আজ মালা চন্দন’, ‘কথা ছিল দেখা হবে’, ‘এ জীবনে যদি আর কোনো দিন’, ‘নওল কিশোর’, ‘কালো কলেবর কানহাই’, ইত্যাদি গান এখনো শ্রোতাদের মন ভরায়। তাঁর কণ্ঠে নজরুল সংগীত ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ গায়কিতে আজও অনন্য। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে জুলাই মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।