মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন (১৮৮৮–১৯৯৪)। স্বশিক্ষিত সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তক। তাঁর জন্ম ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। ছোটোবেলা থেকেই প্রচুর পড়তেন তিনি। তাঁর শিক্ষা ও সমসাময়িক জ্ঞানী–গুণীদের সাথে সুসম্পর্কে তিনি বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সমাজের একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। বাবার মৃত্যুর পর প্রথম জীবনে তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বীমা কোম্পানির কাজ ছেড়ে নতুন পেশার সন্ধানে কলকাতায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর তিনি সওগাত নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে সাময়িকীটির প্রকাশনা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় এর প্রকাশনা শুরু করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সওগাত সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তরুণ লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল এবং আরও অনেকে এ সওগাত পত্রিকায় তাঁদের প্রগতিশীল ও ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ পান। কার্টুনের মাধ্যমে ব্যাজ্ঞাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের অব্যবস্থাকে তিনি তীব্রভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর পত্রিকায়। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে থেকেও তিনি তখনকার দিনে মুসলিম নারীর ছবি ছাপিয়ে তীব্র সমালোচনায় পড়েন। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় ‘সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মুসলিম সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সওগাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নাসিরুদ্দীন ‘বেগম’ নামে একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেশবিভাগের পর নাসিরউদ্দীন পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে সওগাত পত্রিকা আবারও নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর প্রতিভা ও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।