মোহরা পানি শোধনাগারের পাশে বসছে নতুন প্রকল্প

উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ কোটি লিটার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে দিনদিন বাড়ছে ওয়াসার সুপেয় পানির চাহিদা। দিনদিন জনসংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রসারণ হচ্ছে নগর। যার ফলে ওয়াসার পানির চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এখন থেকেই আগামী ৫১০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, দিনদিন চট্টগ্রাম নগরীতে পানির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে নগরীর পানির চাহিদা প্রায় ৫৬ কোটি লিটার। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা উৎপাদন করছেন ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি লিটারের মত। আগামী ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সাল নাগাদ এই নগরীতে পানির চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ কোটি লিটারে। তাই এখন থেকেই পানি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। ‘লবণাক্ততা পরিহারের লক্ষ্যে মোহরা পানি শোধনাগারের ইনটেক পয়েন্ট স্থানান্তর এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে পানির চাহিদার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৭০ কোটি লিটারে। এই পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগারের পাশে ইউনিট২ নামে আর একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই প্রকল্পের পানি উৎপাদনের সক্ষমতা হবে প্রায় ৫০ কোটি লিটার। প্রথম পর্যায়ে আমরা দৈনিক ২০ কোটি লিটার উৎপাদন করব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের যে ইনটেক পয়েন্ট থেকে পানি উত্তোলন করা হয় তা আরো ১০ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে কর্ণফুলী নদীর যে অংশে পুরো বছর পানির প্রবাহ ভালো থাকে এরকম স্থানে ‘ইনটেক পয়েন্ট’ তৈরি করা হবে। বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প যেটি আছে; তার পাশে মোহরা ইউনিট২ করার মত আমাদের জায়গা রয়েছে। এই একই প্রকল্পের অধীনে লবণাক্ততা নিরসনের জন্যও একটি প্রকল্প যুক্ত রয়েছে। এই একই প্রকল্পে দুটি কাজ হবে।

প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাতের অভাবে মোহরা ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। ফলে পানি উৎপাদন কমে যায়। লবণাক্ততা এই সমস্যার সমাধানে ২০২২ সালের ফ্রান্স ভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা সুয়েজ একটি ধারণাপত্র দিয়েছে। এতে বিকল্প ইনটেক স্টেশন নির্মাণ, প্রিসেটেলমেন্ট রিজার্ভার, নতুন শোধনাগার নির্মাণকে প্রাধান্য দিয়ে এই প্রকল্পের সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশের আলোকে আমরা একটি প্রকল্পের ধারণাপত্র তৈরি করে অর্থায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে পাঠিয়েছি।

প্রকল্পটি অর্থায়নে আগ্রহী ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) চূড়ান্ত হয়েছে। প্রকল্পটির ধারনাপত্র আমরা প্ল্যানিং কমিশনে পাঠিয়েছি। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক প্রস্তাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। আমরা প্রকল্পের ডিটেইল ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করবো। আমরা দাতা সংস্থার কাছে প্রকল্পের যে ধারণাপত্র পাঠিয়েছি তাতে এই প্রকল্প ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, সব কিছু ঠিক থাকলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক পাঠাবে অর্থায়নকারী সংস্থাটি। প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চায় কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। তারা নিজস্ব খরচে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সম্ভাব্য ইনটেক (পানি তোলার স্থান) নির্ধারণ করবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ইডিসিএফ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে পারে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত (৫ মাস) ওয়াসার পানির উৎসস্থলে লবণাক্ততা দেখা দেয়। বিশেষ করে ওয়াসার মদুনাঘাট ও মোহরা পানি শোধনাগারের উৎপাদিত পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানির উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে নগরীতে পানির সংকট দেখা দেয়। এই দুই সংকট (পানি সংকট এবং লবণাক্ততা) কাটিয়ে উঠতে চট্টগ্রাম ওয়াসা নতুন একটি প্রকল্পে হাত দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে : তারেক রহমান
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা