মোবাইল স্ক্রিনে ভোটের উত্তাপ

চাকসু নির্বাচন

চবি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে এবার প্রচারণা কেবল স্টেশন, হলঘর বা দেয়ালের পোস্টারে সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা মোবাইল স্ক্রিনেই এখন ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়া এখন হয়ে উঠেছে প্রধান নির্বাচনী মঞ্চ। প্রতিটি প্যানেল তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে।

শিক্ষার্থীরা ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ দেখছেন প্রার্থীর ভিডিও বার্তা ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই, আপনাদের গবেষণার কথা বলব, প্রশ্ন তুলব, দায়িত্ব নেব। আপনারা ভোট দেবেন আশা করি।’ ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে কেউ সমর্থন জানাচ্ছেন, কেউ আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে পোস্টার ও স্লোগানও।

আগামী ১৫ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন। ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হলেও শারদীয় দুর্গোৎসবের কারণে ক্যাম্পাস ফাঁকা। কিন্তু প্রার্থীরা থেমে থাকেননি। ফাঁকা হল বা ক্লাসরুমের বদলে বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল মাঠ।

৬২ হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’। তবে ৬২ হাজার সদস্যের গ্রুপ ছাড়াও চবি কেন্দ্রিক আরও অসংখ্য গ্রুপ আছে। এখন এই ফেসবুক গ্রুপগুলো হয়ে উঠছে অনলাইনে চাকসু নির্বাচনী আঙিনা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপটিতে মো. তালিফ মিয়ার ভিডিও বার্তাটি সরাসরি নজর কাড়ছে। গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি। ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের এ শিক্ষার্থী বললেন, আমি ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে চাই না। গবেষণার প্রতিটি প্রশ্ন আমি শিক্ষার্থীদের হয়ে তুলব।

ছাত্রীদের মধ্যে তানিয়া রহমানের পোস্টারও আলোচনায়। স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। পোস্টারের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও দিয়েছেন। তালিফ, তানিয়ার মতো আরও অনেক প্রার্থী আছেন যারা অনলাইনে নিজের প্রচারণা এভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রতিটা প্যানেল নিজেদের প্যানেলের নাম দিয়ে ফেসবুক পেজ খুলে নির্বাচনী কার্যক্রম প্রচারণা করছেন।

১৯৯০ সালের শেষ চাকসু নির্বাচনে প্রচারণার প্রধান মাধ্যম ছিল হাতে ছাপানো লিফলেট, দেয়ালের পোস্টার আর ঝুপড়ি বক্তৃতা। ইন্টারনেট তখনো বাংলাদেশে পৌঁছায়নি। যার কারণে প্রতিটা শিক্ষার্থীর ধারে ধারে সশরীরে গিয়ে কথা বলতে হতো। প্রার্থীদের কার্যক্রম সরাসরি গিয়ে জানান দিতে হতো। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো যায়। যা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে।

এবারের নির্বাচনে প্যানেলগুলো একের পর এক ফেসবুক পেজ খুলে প্রচারণা চালাচ্ছে। কেউ লাইভ দিচ্ছেন, কেউ ভিডিও পোস্ট করছেন। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’এর ফেসবুক পেজের অনুসারী ছাড়িয়েছে ২৪ হাজার। পেজে দেখা গেছে, প্রার্থীরা হলে ঘুরছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, দোয়া চাইছেন।

দ্রোহ পর্ষদ’, ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’, ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’, ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ‘চাকসু ফর স্টুডেন্টস রাইটস’ প্রতিটি নামের সঙ্গে পেজ, প্রতিটি পেজে হাজারো অনুসারী। ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সাজ্জাদ হোসেনও অনলাইনে সক্রিয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময়, ভিডিও পোস্ট ও সমর্থন চাওয়ার মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছেন নির্বাচনী বার্তা।

বাম সংগঠন ‘দ্রোহ পর্ষদ’এর প্যানেল এইবার প্রচারণায় এনেছে অভিনবত্ব। তাদের ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিওতে প্রার্থীরা টিভি নিউজ উপস্থাপকের মতো পরিচয় দিচ্ছেন। ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, ফেসবুক এখন সবচেয়ে বড় মঞ্চ। মন্তব্য দেখে বুঝছি শিক্ষার্থীরা কী চায়।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসিন বলেন, প্রতিদিন নতুন পোস্ট দেখে ভালো লাগছে, কিন্তু কিছু নারী প্রার্থীরা অরুচিকর মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন। এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি। চাকসু নির্বাচন কমিশন এই বিষয় তদারকি করছে। অভিযোগ এলে দ্রুত সমাধান হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন চলাকালীন ফেসবুকসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তদারকি চালানো হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে ৩ অপহৃত উদ্ধার, ৩ অপহরণকারী আটক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতি তিনজন পোশাককর্মীর দুজনের বিয়ে ১৮ বছরের আগে : গবেষণা