একুশ শতকের টেক নির্ভর দুনিয়ায় তথ্য ও প্রযুক্তির সুবাদে জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও এখনও প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি। অন্ধকার নির্জন সড়ক কিংবা জনাকীর্ণ এলাকা, সর্বত্র হুমকিতে থাকে নারীর ব্যক্তিগত সুরক্ষা। সময়ের এই চিরন্তন সমস্যার নিরসনকল্পে সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে প্রযুক্তি ভিত্তিক গবেষণা। সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকা স্মার্টফোনটিকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করতে নেয়া হচ্ছে নানা প্রকল্প। এরই ফলশ্রুতিতে বিগত দশক জুড়ে তৈরি করা হয়েছে নিত্য নতুন মোবাইল অ্যাপ। প্রিয় পাঠক তাহলে চলুন সেগুলোর মধ্য থেকে বহুল ব্যবহৃত কিছু মোবাইল অ্যাপস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
লাইফ থ্রি সিক্সটি (Life360)
নারীর নিরাপত্তার স্বার্থে নির্মিত মোবাইল অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম এই লাইফ থ্রি সিক্সটি (https://www.life360.com/intl/) অ্যাপ। ২০১০ সালে একই নামের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এই অ্যাপটি চালু করে। এটি ব্যবহারের জন্য এন্ড্রয়েড নাইন ও তার পরের সংস্করণ অথবা আইওএস ফিফটিন বা তদ–ঊর্ধ্ব সংস্করণের ফোন থাকতে হবে। এই অ্যাপটির সাইজ ১৬৯ মেগাবাইট। লোকেশন শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি লাইফ থ্রি সিক্সটি দুই দিন পর্যন্ত ব্যক্তির অবস্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ রাখতে পারে। তবে যে বিষয়টি এই অ্যাপকে সবার থেকে আলাদা করেছে তা হচ্ছে, এতে একসঙ্গে একাধিক জন পরস্পরের রিয়েল–টাইম অবস্থান দেখতে পারেন। তাছাড়া গাড়িতে ভ্রমণকালে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে অ্যাপটি তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি পরিষেবাকে জানাতে পারে।
বিসেইফ (bsafe)
এটি এমন একটি অ্যাপ যার মাধ্যমে খুব দ্রুততার সঙ্গে ব্যক্তির অবস্থান তার বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করা যায়। এর বিশেষ ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে জরুরি মুহূর্তে এসওএস সিগন্যাল পাঠানো এবং স্বয়ংক্রিয় ভিডিও রেকর্ড করা। এছাড়া এতে রয়েছে ফোন স্পর্শ ছাড়াই সাহায্য আবেদনের জন্য বার্তা পাঠানোর সুবিধা। ২০১১ সালে প্রকাশিত অ্যাপটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মোবাইল সফটওয়্যার এএস। এন্ড্রয়েড অ্যাপটির জন্য ডিভাইসে জায়গা রাখতে হবে ১০ দশমিক ৫ মেগাবাইট, আর আইওএস অ্যাপের জন্য ৮৭ দশমিক ১ মেগাবাইট। বিসেইফ অ্যান্ড্রয়েড নাইন (https://www.getbsafe.com/bsafe-app) ও তার ওপরের সংস্করণ এবং আইওএস থারটিন এবং তার পরবর্তী সংস্করণগুলোর জন্য প্রযোজ্য।
আইশেয়ারিং (iSharing)
২০১২ সালে নির্মিত এই অ্যাপটিকে ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে নির্মাতা আইশেয়ারিং সফট ইন কর্পোরেশন। আইশেয়ারিং অ্যাপটির (https://isharingsoft.com/) মাধ্যমে দূরবর্তী কোনও অঞ্চলে ভ্রমণকালে পরিবারের সদস্যের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যায়। জিপিএসের এই রিয়েল–টাইম সুবিধাটি ব্যবহারকারী এবং তার পরিবার দু’জনেই একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারে। এছাড়া এটি ব্যক্তির অবস্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখে এবং তা পর্যালোচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের জন্য আগাম সতর্কবার্তা দেয়। এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে ডায়াল ছাড়াই দ্রুত যোগাযোগ করতে সহায়তা করে। অ্যান্ড্রয়েডে এর জন্য জায়গা দরকার হবে ৬৩ মেগাবাইট, প্রয়োজন হবে এন্ড্রয়েড সেভেন এবং তার ওপরের সংস্করণগুলো।
মাই সেফটিপিন (My SafetiPin)
যেকোনো এলাকার স্বাভাবিক নিরাপত্তা অবস্থা যাচাই করে আগে থেকেই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করতে পারা এই অ্যাপটির বিশেষত্ব। মূলত এই বিশেষত্ব দিয়েই ডেভেলপার সেফটিপিন ২০১৬ সালে প্রকাশ করে এই অ্যাপটি। এটি জিপিএস ব্যবহার করে তুলনামূলক নিরাপদ রুটের খোঁজ দিতে পারে। একই সাথে ব্যবহারকারীর বন্ধু বা পরিবারও তার অবস্থান দেখে নিতে পারে। এ সময় ব্যবহারকারী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকলে অ্যাপটি পরিবারের সদস্য বা বন্ধুকে সতর্ক বার্তা পাঠায়। মাই সেফটিপিন (https://safetipin.com/my-safetipin-app/) অ্যাপটি চালানোর জন্য প্রয়োজন হবে এন্ড্রয়েড ফোর পয়েন্ট ফোর ও তার পরের সংস্করণ এবং আইওএস থারটি বা তার পরবর্তী সংস্করণ। অ্যান্ড্রয়েডে অ্যাপটির সাইজ ২৩ দশমিক ৫ মেগাবাইট এবং আইফোনে ১৩৪ দশমিক ৩ মেগাবাইট ।
ইউ আর সেইফ (UrSafe)
ইউআরসেইফ (https://ursafe.com/) অ্যাপটি সরাসরি মেট্রোপলিটন পুলিশের নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে সংযুক্ত। এখানে শুধুমাত্র একটি ট্যাপ অথবা ভয়েস নির্দেশনার মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন বার্তা পাঠানো যায়। জরুরি অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কল করার জন্য ফোন স্পর্শ বা নাম্বার ডায়ালেরও প্রয়োজন হয় না। এমনকি পরিস্থিতি বিশেষে প্রয়োজনে এটি লাইভ ভিডিও ও অডিও স্ট্রিমিং চালু করে দিতে পারে। অত্যাধুনিক এই অ্যাপটি নির্মাণ করে ইউআরসেইফ টেকনোলজিস। ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০১৯ সালে। ৭২ মেগাবাইট সাইজের এই আ্যপটি চালাতে হলে আপনার এন্ড্রয়েড সেভেন ও তার অধিক অথবা আইওএস এগার বা তার পরের ওএস সমর্থিত ডিভাইস থাকতে হবে।
অভয় (Avoy)
বিওয়াইএস (বরিশাল ইয়থ সোসাইটি) এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নিমির্ত অ্যাপ ‘অভয়’ (https://avoy.io/)। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল ভিত্তিক এই অ্যাপটির উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালে। মাত্র তিন মেগাবাইটের এই অ্যাপটিতে কন্টাক্ট নাম্বারগুলো দ্রুত ফোনের ডায়ালে চলে আসে। ফলে জরুরি অবস্থায় ফোন করতে সুবিধা হয়। এছাড়া এতে রয়েছে নিকটবর্তী থানা, জরুরি হেল্পলাইন নাম্বার ও সরকারি তথ্যসেবাসহ বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার। অ্যাপটি এন্ড্রয়েড ফাইভ ও তার উপরের ওএস ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযোজ্য।
আই অ্যাম সেইফ (ImSafe)
২০২২ সালে প্রকাশিত এই অ্যাপের নির্মাতা ‘ফ্রি টু লিভ টেক সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড’। এখানে লোকেশন শেয়ারিং ও ট্র্যাকিংয়ের পাশাপাশি আছে এসওএস সিগন্যাল পাঠানোর সুবিধা। অতিরিক্ত সংযোজন হিসেবে এতে রয়েছে নিকটস্থ থানার দাগাঙ্কিত মানচিত্র। ব্যবহারকারী কোনও দুর্বৃত্তের কবলে পড়লে আই অ্যাম সেইফ (https://www.imsafe.app/) অ্যাপটি তাদের অগোচরেই অডিও, ছবি ও স্থানের তথ্যাবলি রেকর্ড করতে পারে। সাড়ে তিন মেগাবাইটের এই অ্যাপটি এন্ড্রয়েড নাইন ও এর ঊর্ধ্ব ওএস (অপারেটিং সিস্টেম) এর জন্য লাগসই।
বহুল ব্যবহৃত এই অ্যাপসগুলো ছাড়াও নুনলাইট (https://www.noonlight.com/noolight-app), গার্ডিয়ান (https://www.get-guardians.com/) এই অ্যাপগুলোও নারীর নিরাপত্তা রক্ষায় প্রাথমিকভাবে পরম নির্ভরতার জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।