মোনাজাতউদ্দিন (১৯৪৫–১৯৯৫)। সাংবাদিক ও লেখক। খবরের গভীর অনুসন্ধান, অতি সহজ–সরল উপস্থাপন, পাঠকের বোধগম্য শব্দ আর বাক্য গঠনে বিশেষ পারদর্শিতায় মোনাজাতউদ্দিনের ঠাঁই হয়েছে পাঠক মনে। তিনি গ্রাম সাংবাদিকতার আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। মোনাজাতউদ্দিন ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ই জানুয়ারি রংপুর শহরের কেরাণীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আলিমউদ্দিন, মাতা মতিজাননেছা। তিনি ‘রংপুর কৈলাশরঞ্জন স্কুল’ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ‘রংপুর কারমাইকেল কলেজ’ থেকে আইএ এবং বি এ পাস করেন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চায় মনোযোগী হন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রংপুরের স্থানীয় বিভিন্ন কাগজে লেখালেখি শুরু করেন এবং দৈনিক রংপুর নামে একটি পত্রিকা প্রকাশনা ও সম্পাদনা করেন। দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক আজাদ–এর উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি ছিলেন ১৯৭২–১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। অতঃপর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক সংবাদ–এর উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করে সাংবাদিকতায় খ্যাতি অর্জন করেন। সংবাদপত্রের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রামীণ জীবনের খবরাখবর নগরবাসী–পাঠকের কাছে ভিন্ন মাত্রায় পরিবেশন করে তিনি সাংবাদিকতাকে জনগণের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল কাজ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হন। গ্রামের খবরকে ঘিরে তার উপলব্ধি জাতীয় খবরের গণ্ডি ছুঁয়েছে। উত্তরের গ্রামীণ জনপদের সেই খেটে খাওয়া মানুষের খবরও জায়গা করে নিয়েছে জাতীয় পত্রিকার প্রথম পাতায়; জাতীয় খবরের পাশে। তিনি সৎ, নির্ভীক, নিষ্ঠাবান এবং কঠোর পরিশ্রমী সাংবাদিক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। সাংবাদিকতা ছড়াও ছোটগল্প ও নাটক রচনা, আলোকচিত্র, প্রচ্ছদ ও অলংকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও তিনি কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর লেখা গ্রন্থের মধ্যে শাহ আলম ও মজিবরের কাহিনী (১৯৭৫), পথ থেকে পথে (১৯৯১), কানসোনার মুখ ও সংবাদ নেপথ্যে (১৯৯২), পায়রাবন্দ শেকড় সংবাদ (১৯৯৩) প্রভৃতি প্রধান। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যপর্বে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ–এর সাংবাদিকতায় যোগ দেন। মোনাজাতউদ্দিন ‘চারণ সাংবাদিক’ হিসেবে কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন। তার মধ্যে ‘জহুর হোসেন স্বর্ণপদক’ (১৯৮৪), ‘ফিলিপস পুরস্কার’ (১৯৯৩), ‘একুশে পদক’ (১৯৯৭ মরণোত্তর) উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে ডিসেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠের সংবাদ সংগ্রহকালে যমুনা নদীতে প্রাণ হারান।