মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠনে জোট সঙ্গীদের সমর্থন

পদত্যাগ করলেন মোদি, শপথ শনিবার ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসাবেই দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত ইন্ডিয়ার

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৬ জুন, ২০২৪ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নতুন সরকার গঠন করতে জোট সঙ্গীদের সমর্থন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২৯৩ আসনে জিতে আগামী শনিবার নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এর ফলে টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সএনডিএর সব দলের পক্ষ থেকে তাদের সমর্থন নিশ্চিত হয়েছে বলে দলটি ঘোষণা দিয়েছে। দলটির এক বিবৃতি বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদীকেই সর্বসম্মতিক্রমে জোটের নেতা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। ভারতের দরিদ্র, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষ এবং নারী, যুবক ও কৃষকদের সেবায় শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা ২১ নেতার মধ্যে রয়েছে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) নেতা নীতীশ কুমারের নাম। মোদীকে গতকাল বিকেলে সর্বসম্মতিক্রমে জোটের নেতা নির্বাচিত করা হয় এবং তার ‘নেতৃত্ব’ এবং ‘তার অধীনে জাতির অগ্রগতি’র জন্য অভিনন্দন জানানো হয়। জোট নেতারা দেশ গঠনে তার পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তারা মোদীর লক্ষ্য অর্জনে পাশা থাকার আশ্বাস দেন।

এর আগে গতকাল দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মোদী ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে শপথগ্রহণ পর্যন্ত মোদীকে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছেন।

যেহেতু জোটসঙ্গীদের সমর্থন নিশ্চিত হয়ে গেছে, শীঘ্রই নরেন্দ্র মোদী প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সাক্ষাতে সরকার গঠনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সমর্থনের কথা ব্যক্ত করবেন তিনি। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, তিনি শনিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। যদিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি।

অন্যদিকে লোকসভা ভোটে ভাল ফল করলেও বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সরকার গঠনের জন্য উপযুক্ত সংখ্যা নেই। তাই আপাতত ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসাবেই লড়াই জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিল বিরোধী জোট। গতকাল জোটের বৈঠকের পর তেমনই ইঙ্গিতই দিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, মোদীর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে ইন্ডিয়া। জোটের সব শরিকই এক সুরে কথা বলবে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে।

বৈঠকের পর জোট শরিক আইইউএমএলএর নেতা পিকে কুনহালিকুট্টি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় স্বস্তিতে নেই বিজেপি। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। শিবসেনার নেতা সঞ্জয়ও বলেন, জনগণ এই সরকার বদলে ফেলতে চেয়েছিল। সঠিক সময়েই সেই লক্ষ্য পূরণ হবে।

জোট সামলানোর চ্যালেঞ্জ : এর আগে একাধিকবার রাজ্য ও কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে, কোনোবারই আসনের সংখ্যার বিচারে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করতে অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হয়নি। গত ১০ বছরেও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায় ক্ষমতার ব্যবহার পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না। কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে। সেই জোট সঙ্গীদের পক্ষ বদলের প্রবণতা আবার সর্বজন বিদিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতীশ কুমার এবং নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবে না এবং নীতীশ কুমার তো হাওয়ার দিক বদলের মতো জোট বদলিয়ে ফেলেন। মোদীর এই মডেলে কাজ করার অভিজ্ঞতাই নেই। এখন হঠাৎ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই নতুন কাজের ধরন তিনি কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার ওপরেই এই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেসরকারি শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলিতে সমস্যা নেই : শিক্ষামন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধফেবারিটের মতো বিশ্বকাপ শুরু ভারতের