বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস মোটরযান নিঃসৃত ধোঁয়া। এ ধোঁয়া থেকে পরিবেশ কী পরিমাণ দূষিত হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণে নগরে একটি বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বা এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা) অনুদান প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ স্টেশন স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে জরিপ চালিয়ে জাইকা প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম শহরে চারটি জায়গাও বাছাই করেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট ছয়টি এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে জাইকার। এর মধ্যে পাঁচটিই স্থাপন করা হবে ঢাকায়। তবে ঢাকায় উপযুক্ত জায়গা পাওয়া না গেলে চট্টগ্রামে স্টেশনের সংখ্যা বাড়তে পারে। চট্টগ্রামে স্টেশন স্থাপন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাইকার একটি প্রতিনিধি দল গতকাল রোববার পরিবেশ অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকও করেছে। সেখানে প্রস্তাবিত চারটি জায়গা তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবিত জায়গাগুলো হচ্ছে– পোর্ট কানেকটিং রোড, এম এ আজিজ রোড, জিইসি মোড় এবং তার পাশেই সিডিএ এভেনিউ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জাইকা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়ি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এ বি এম সাদিকুর রহমান।
তিনি আজাদীকে বলেন, স্টাডি চলছে। প্রাথমিকভাবে কিছু জায়গার ফিজিবিলিটি (সম্ভাব্যতা) দেখা হচ্ছে। জায়গা যদি নেয়ার মত হয় সেক্ষেত্রে এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন বসানো হবে। তবে প্রস্তাবিত জায়গাগুলো চূড়ান্ত হয়নি। সেগুলো যে কোনো মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন থেকে যানবাহন থেকে যে দূষণ হয় সেটা মনিটরিং করা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামে যে স্টেশন আছে সেখানে যানবাহন–ইন্ড্রাস্ট্রিসহ সব ধরনের দূষণ মনিটরিং করে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপ–পরিচালক মো. কামরুল হাসান আজাদীকে বলেন, আমাদের যে স্টেশনগুলো আছে সেগুলো পরিদর্শন করেছে জাইকা প্রাতনিধি দল। আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে। সেখানে জানিয়েছে তারা আরেকটি স্টেশন করতে চায়। সেটা হলে অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কমকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, জাইকা মূলত পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন করবে। কর্পোরেশন এলাকায় কিছু করতে হলে আমাদের থেকে অনুমতি নিতে হয়। সে জন্য তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০২১–২০২২ অর্থ বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে মোট ১৬টি স্থায়ী বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নগরের আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ এবং বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পাশে একটি করে মোট তিনটি বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট (কেস) বা নির্মল বায়ু টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের আওতায় স্টেশনগুলো নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রামের তিনটি স্টেশনসহ সারা দেশের স্টেশনগুলো থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যগুলো কেন্দ্রীয় সার্ভারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বাতাসের বায়ুমানের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। আর্ন্তজাতিক মানদণ্ডে বাতাসের একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) শূন্য থেকে ৫০ হলে বাতাসের মান ভালো এবং ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত হলে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। অথচ গত ফেব্রুয়ারি মাসে সূচক ছিল ১৮৯। যা আর্ন্তজাতিক মানদণ্ডে অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত। এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত স্ট্যামর্ফোড বিশ্ববদ্যিালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র–ক্যাপস এর তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী বায়ুমান পরীক্ষায় বায়ু দূষণের দিক দিয়ে নবম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম।