মৈত্রেয়ী দেবী (১৯১৪–১৯৯০)। সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী হিসেবে সুপরিচিত। মাত্র ষোল বছর বয়সে প্রকাশিত তাঁর লেখা কবিতার বই ‘উদিতা’র ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অল্প বয়স থেকেই মৈত্রেয়ী কবির স্নেহধন্য হয়েছিলেন। মৈত্রেয়ী দেবী ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর তার বাবার কর্মস্থল চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও মায়ের নাম হিমানী মাধুরী রায়। তার বাবা ছিলেন একজন দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক। তার শৈশব কাটে বাবার বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈলঝারার গৈলা গ্রামে। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা মৈত্রেয়ী বি.এ পাস করেছিলেন দর্শনশাস্ত্রে। আর সাহিত্য সাধনা করতেন ছেলেবেলা থেকেই। সাহিত্য রচনায় তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ছাত্রী। মৃত্যুর চার বছর আগে মৈত্রেয়ীর মংপু’র বাড়িতে কবিগুরু চারটি অবকাশে প্রায় আট মাস যাপন করেছিলেন। সেই স্মৃতি নিয়ে মৈত্রেয়ী দেবী রচনা করেন অনবদ্য সাহিত্যকর্ম ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। মৈত্রেয়ী দেবী রচিত গ্রন্থের মধ্যে চার খণ্ডের কাব্যগ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনি এবং দর্শন ও সমাজসংস্কারমূলক বেশ কিছু রচনা রয়েছে। রবীঠাকুরকে নিয়ে রচিত তাঁর স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় আটটি। ভারত বিভক্তির পর উপমহাদেশে যে সামপ্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছিল তার বিরুদ্ধে মৈত্রেয়ী ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ’। ১৯৭১–এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে ত্রাণকাজে নিযুক্ত ছিলেন মৈত্রেয়ী। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ন হন্যতে’, ‘উদিতা’, ‘বিত্তছায়া’, ‘স্তবক’, ‘আদিত্য মরীচি’, ‘হিরন্ময় পাখী’, ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’, ‘বিশ্বসভায় রবীন্দ্রনাথ’, ‘কবি সার্বভৌম’, ‘এত রক্ত কেন’, ঋগ্বেদের দেবতা ও মানুষ’, ‘মহা সোভিয়েত’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ‘ন হন্যতে’–র জন্য লেখিকা ভারত সরকার প্রদত্ত সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার লাভ করেন। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতেও ভূষিত করে। তাঁর সাবলিল ও আকর্ষণীয় রচনাশৈলী সহজেই পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।