পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস বা মে দিবস হিসেবে পালিত হয় সারা বিশ্বে। এর নেপথ্য পটভূমিতে রয়েছে শ্রমিক গোষ্ঠীর দুর্মর সংগ্রামের ইতিহাস। ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের কাজের ঘণ্টা কমাবার আন্দোলন ও অন্যান্য দাবি নিয়ে পুঁজিপতি শাসক শ্রেণির নিষ্ঠুর পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে অসহায় শ্রমিক শ্রেণির আত্মোৎসর্গের ইতিহাস দিনটিকে বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত করেছে। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ইউরোপ আমেরিকার পুঁজিপতিরা শ্রমিকদের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করতো। ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা শ্রম দিবস ছিল সাধারণ নিয়ম। এমন কি কোনো কোনো শ্রমিককে দৈনিক বিশ ঘণ্টাও কাজ করতে হতো। এই সময়সীমাকে দশ ঘণ্টায় কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকে। আটের দশকে কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা ধার্য করার স্বপক্ষে শ্রমিকরা জোট বাঁধে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে কোনো শ্রমিকই দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। ঐ দিন আমেরিকার শিকাগো শহরে প্রত্যক্ষ ধর্মঘটে সামিল হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ শ্রমিক। স্বতঃস্ফূর্ত এই বিশাল সমাবেশ দেখে পুঁজিপতিরা সেদিন পিছিয়ে পড়ে।
৩ মে একটি কারখানায় শ্রমিকদের ওপর পুলিশের নৃশংস আক্রমণে ছয় জন শ্রমিক নিহত হন। পরদিন হে মার্কেটে সমবেত প্রতিবাদ সভায় নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে বর্বর পুলিশ। চারজন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। অবশেষে বাস্তিল পতনের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৮৯০ সালের ১ মে থেকে প্রতি বছর পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত কাজের সময়সীমা আট ঘণ্টা সহ শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিও মেনে নিতে বাধ্য হয় পুঁজিপতিরা। সেই থেকে সারা বিশ্ব জুড়ে শ্রমিকরা পহেলা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করে। বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারী শ্রমিকদের রক্তরঞ্জিত লাল জামা থেকেই মে দিবসের লাল পতাকার উদ্ভব।