মেয়ের দাফনে থাকতে পারেননি, স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরছেন হাসপাতালে

| শনিবার , ২২ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

দুই শিশু সন্তান নিয়ে আনন্দেই দিন কাটছিল আব্দুল হক ও কুলসম বেমগ দম্পতির। বয়স হলে দুজনকে মাদ্রাসায় পড়ানোরও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু ভূমিকম্পে ওলটপালট হয়ে গেছে তাদের পরিবার। শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে বাড়ির পাশের উঁচু দেয়াল ধসে মারা যায় এ দম্পতির ১০ মাসের কন্যাসন্তান ফাতেমা। গুরুতর আহত হন ফাতেমার মা কুলসুম (৩০) ও তাদের আরেক প্রতিবেশী নারী জেসমিন আক্তার (৩৫)। প্রতিবেশী ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার সময় ফাতেমা ছিল মায়ের কোলে। ধসে পড়া ইট সরিয়ে শিশুটির মরদেহ বের করেন তারা। মা ছিলেন তখন সঙ্গাহীন। বিকালে বাড়ির পাশে শিশুটির জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। বাবামার অনুপস্থিতিতেই মরদেহ দাফন করতে বাধ্য হন স্বজনরা। খবর বিডিনিউজের।

মেয়ের দাফনে বাবা আব্দুল হকের থাকতে না পারার কারণ জানালেন ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, তার ভায়রা (ফাতেমার বাবা) আব্দুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে দুপুর থেকে হাসপাতালেহাসপাতালে ঘুরছেন। এখন পর্যন্ত তিনটি হাসপাতালে গেলেও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। দুটি হাসপাতালে শয্যা না থাকায় ভর্তি নেওয়া হয়নি।

শুরুতে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় কুলসুমকে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর শয্যা না থাকার কথা জানানো হয় স্বজনদের।

পরে তাকে বেসরকারি ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রোগীকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশের কথা জানানো হয় বলে মোহাম্মদ হোসেন বলেন।

দুপুর থেইকা আমরা ঘুরতেছি। ঢাকা মেডিকেলে খালি ওয়াশ কইরা ব্যান্ডেজ কইরা বলে সিট নাই, বাড়িতে নিয়ে যেতে। কিন্তু মাথায় এমন আঘাত পাওয়া রোগী যার কোনো হুঁশ নাই, কথা বলতে পারে না, তারে কেমনে বাড়িতে নেই। কিন্তু ভাই, কোথাও ভর্তি করাতে পারতেছি না।’ ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ক্ষমতা নাই। নাইলে তিনটা জায়গায় গিয়াও চিকিৎসা কেন পামু না? আমার সোনার বাংলাদেশে গরিবের চিকিৎসা নাই।’ চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তারা আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছেন। ‘ওই হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত আমার শালি বাঁচে কিনা শিওর না’, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছিলেন মোহাম্মদ হোসেন। তিনি আরও বলেন, এই দম্পতির দুই মেয়ে। আরেক মেয়ে দুই বছরের নুসাইবা জান্নাত ঘটনার সময় পাশেই তার নানাবাড়িতে ছিল। যে কারণে তার কিছু হয়নি।

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন দেয়ালটির কোনো রডপিলার ছিল না। কিন্তু আহত কুলসুমকে এখনো হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সাইফুল বলেন, ‘স্বজনরা জানিয়েছিলেন, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারা যে শয্যা পাচ্ছেন না বা কোথাও এখনো ভর্তি হতে পারেনি, এটা জানা ছিল না। হয়তো তথ্যের ঘাটতি হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও কিন্তু তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে অগ্রাধিকার রয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩৩ কিলোমিটারের রেলপথটি যেন মৃত্যুফাঁদ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামেও ভূমিকম্প অনুভূত, হেলে পড়েছে ছয়তলা ভবন