মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন খোরশেদ আলম সুজন। নির্বাচিত মেয়র দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত সময়ে সিটি কর্পোরেশনের ‘অত্যাবশ্যকীয় ও আর্থিক’ দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে ১৮০ দিনের জন্য গত ৬ আগস্ট প্রশাসকের দায়িত্ব নেন সুজন। গতকাল তা সোমবার তা পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ২৬ দিন, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে ৩০ দিন করে ৬০ দিন, অক্টোবর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ৩১ দিন করে ৯৩ দিন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে গতকাল শেষ কর্মদিবসে সকাল সাড়ে ১০টায় টাইগারপাসস্থ নগর ভবনে আসেন বিদায়ী প্রশাসক সুজন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভার্চুয়ালি চসিক পরামর্শক কমিটির সাথে বৈঠক, এরপর প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে পুনরায় কর্পোরেশন হয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় লালদীঘি পার্কে অনুষ্ঠিত কবিতা পাঠ ও পিঠা উৎসবে অংশ নেন। এরপর পর নগর ভবনে যান। রাত ৮টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদর কাছ থেক বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশে রাওয়ানা হন।
শেষ কর্মদিবস খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমার কোন অতৃপ্তি নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি আমার সাধ্যমত, আমার যত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ছিল সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি সেই দায়িত্ব পালনে। আমার চেষ্টা ছিল চট্টগ্রামকে একটা পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।’
দায়িত্বপালনকালের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একদিকে আমি কর্পোরেশনের সংকট ও সমস্যার সাথে যুদ্ধ করেছি। অন্যদিকে শহরের চারপাশে যেসব সমস্যা ছিল তার সাথে যুদ্ধ করেছি। এ যুদ্ধে ৬০ লক্ষ নগরবাসীকে সাথে পেয়েছি। সাংবাদিক সমাজ ও পরামর্শক কমিটি আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এজন্য আমি নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। এরপরও আমার ব্যবহারে কোন কষ্ট পেলে বা আমার কাছে প্রত্যাশা ছিল কিন্তু পূরণ করতে পারিনি তেমন কিছু থাকলে জন্য নগরবাসীর কাছে করজোরে ক্ষমা চাচ্ছি।’
দায়িত্ব পালনকালে নিজের দৃষ্টিতে সবচেয়ে কার্যকর কোন কাজটি করেছেন? এমন প্রশ্নে বিদায়ী এ প্রশাসক বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটা কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি সবসময় রাজনৈতিক কর্মী। রাস্তায় থাকার সময় স্লোগান দিই ‘বাধা আসবে যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’। কর্পোরেশনে কাজ করার সময়ও যেখানে বাধা এসেছে সেখানে লড়াই করেছি। সকাল সাতটায় ওঠে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে থেকে তাদের উজ্জ্বীবিত করার চেষ্টা করেছি।’
প্রশাসক বলেন, ‘কর্পোরেশনে বহু সমস্যা আছে। আর্থিক সংকট আছে। কর্পোরেশনের আয় বাড়াতে হবে। তাহলেই কর্পোরেশন এগিয়ে যাবে। অন্যথায় সামগ্রিকভাবে আরো গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে।’
নতুন মেয়রের প্রতি কোন প্রত্যাশা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ তিনি (রেজাউল করিম চৌধুরী) ভালো করবেন। ওনি অনেক ম্যাচিউরড, যোগ্য রাজনীতিবিদ। নগরবাসীর যেসব প্রত্যাশা আমি পূরণ করতে পারিনি সামনে তিনি পূরণ করবেন।’
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় লালদীঘি পার্কে কবিতা পাঠ ও পিঠা উৎসবে বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রিয় নগরবাসী, আমার কাজে যদি আপনারা সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে দোয়া করবেন। আর আমি যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, আমি করজোড়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্রশাসন চালাতে গিয়ে অনেক সময় কঠোর-কাঠিন্যের সঙ্গে চলতে হয়েছে। মেহেরবানী করে আপনারা আমাকে মাফ করে দেবেন। বিশ্বাস করুন, জীবনের শপথ করে বলছি, আমি সততা নিয়ে চলেছি, অসততা করতে চাইনি। আমি যতটুকু পেরেছি, আপনাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
এদিকে আগস্ট মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর পর সিটি কর্পোরেশনে ব্যাপক রদবদল করে অনিয়ম না করার বার্তা দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অনিয়ম তদন্তে কমিটিও গঠন করে দেন। পাশাপাশি স্বয়ং নাগরিক সমস্যা চিহ্নিতকরণে ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’ কমসূচি এবং ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত ও হকারদের শৃঙ্খলায় আনার মাধ্যমে জায়গা করে নেন নগরবাসীর হৃদয়ে। এছাড়া বন্দর-কাস্টমস থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। আবার তদবির করে নগরে গণপরিবহন সেবা নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া নগর উন্নয়নে পরামর্শ গ্রহণে সাবেক দুই মেয়রসহ ১৭ বিশিষ্টজনকে নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেন তিনি। গত ২৬ আগস্ট কমিটির প্রথম সভা এবং গতকাল সোমবার ভার্চুয়ালি হয়েছে শেষ সভা। বিশিষ্টজনদের নিয়ে এ ধরনের কমিটি গঠন করায় প্রশংসিতও হন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সেবাসংস্থাদের সাখে সমন্বয় সভাও করেন।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৯ মর্াচের চসিক নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল। এরপর গত ৫ আগস্ট তৎকালীন মেয়র আ.জ.ম নাছিরের মেয়াদ শেষ হলে খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিকের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। নবনির্বাচিত মেয়রের দায়িত্বগ্রহণের সময় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।