মেয়াদোত্তীর্ণ আর কোনো সিএনজি টেক্সি থাকল না

শেষ দফায় স্ক্র্যাপ করা হলো ১৩৪টি

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২৭ মে, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

নগরে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটি)। এসব গাড়ির ইকোনমি লাইফ (আয়ুষ্কাল) ধরা হয় ১৫ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে গাড়িগুলো ধাপে ধাপে স্ক্র্যাপ করা শুরু করে বিআরটিএ। সর্বশেষ গতকাল বাকি থাকা ১৩৪টি সিএনজি স্ক্র্যাপ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে নগরের মেয়াদোত্তীর্ণ আর কোনো সিএনজি টেক্সি থাকল না। স্ক্র্যাপ করা সিএনজির বিপরীতে মালিকদের নতুন নিবন্ধন দিয়ে থাকে বিআরটিএ।

উল্লেখ্য, ঢাকায়ও একই সময়ে ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দিয়েছিল বিআরটিএ। মেয়াদ চলে যাওয়ায় কয়েক বছর আগে এসব সিএনজি স্ক্র্যাপ করে প্রতিস্থাপন করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়াদ চলে যাওয়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। বিভিন্ন সময়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের পাঁচজন হতাহত হয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বন্দর থানার কলসীর দীঘি এলাকা এবং চান্দগাঁও এলাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটে। উপজেলা পর্যায়ে এ রকম অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি কিছুটা কমে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, মেয়াদোর্ত্তীণ সিএনজির ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সুপারিশ ছিল, সিএনজির ১২তম বছরে প্রতিটি সিএনজির ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ওভারহোলিং করাসহ এর হুডকভার, সিট প্রতিস্থাপন ও বডি রং করতে হবে। এছাড়া বডি, সাসপেনশন, ব্রেক ট্রান্সমিশন ইত্যাদি অংশে প্রয়োজনীয় মেরামত করতে হবে। অনুমোদিত ওয়ার্কশপ থেকে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার হাইপ্রেসার, সিএনজি সিলিন্ডারের হাইড্রোলিক প্রেসার পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া সিএনজি ফুয়েল সিস্টেমের অন্যান্য অংশগুলোর পরীক্ষাও করার সুপারিশ করে বুয়েট। তবে মেয়াদ চলে যাওয়ায় গাড়িগুলো স্ক্র্যাপ করার আশায় বেশিরভাগ মালিক বুয়েটের সুপারিশ আমলে নেয় না। ফলে রাস্তায় চলাচল করা বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিকশা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করায় ঝুঁকি কমেছে বলে জানিয়েছেন সিএনজি চালিত অটো রিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক টিপু চৌধুরী। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমাদের হিসাবে ১৩ হাজারের মধ্যে সবগুলো গাড়ি স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। ইকোনমি লাইফ শেষ হওয়ায় এগুলো স্ক্র্যাপ করা হয়েছে, তাই এখন থেকে আর কোনো ঝুঁকি নেই।’

বিআরটিএ চট্টমেট্রো সার্কেলের উপপরিচালক তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আজ (গতকাল) ১৩৪টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। এখানে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মডেলের সিএনজি রয়েছে। আগেও আমরা স্ক্র্যাপ করেছিলাম, যেগুলো বাকি ছিল তা আজকে করা হয়েছে। এখন আর বাকি নাই। তিনি বলেন, অনেক গাড়ির মালিক বিদেশে ছিলেন। আবার অনেকে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে না আসায় স্ক্র্যাপ করতে পারেননি। তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। এরপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ স্ক্র্যাপ করা হয়েছে।

জানা গেছে, শুরুতে নিবন্ধিত ১৩ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশার লাইফ টাইম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ বছর। পরে মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে তা ১৫ বছরে উত্তীর্ণ করা হয়। পরবর্তীতে বর্ধিত মেয়াদও শেষ হওয়ার পর স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। এর অংশ হিসেবে ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ মডেলে প্রস্তুতকৃত এমন সাড়ে আট হাজার সিএনজি টেক্সি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৯৪৪টি স্ক্র্যাপ করা হয়। এ দফায় স্ক্র্যাপ করা হয় ২০০৪ ও ২০০৫ সালে প্রস্তুতকৃত সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এরপর ২০২২ সালের মে মাসে ৩৫৫টি স্ক্র্যাপ করা হয়। সর্বশেষ বাকি থাকা সিএনজিগুলো গতকাল স্ক্র্যাপ করা হল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘প্রতিবন্ধী লক্ষণ দেখে’ শিশুকে ডাস্টবিনে ফেলে গেল পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতি মাসে চার খুন