মেসির কলকাতা সফরে তুলকালাম

স্পোর্টস ডেস্ক | রবিবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

লিওনেল মেসির সফর ঘিরে পরিকল্পনা সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু পরে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। মেসিভক্তদের একটা অংশ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক ভাংচুর চালান, যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হল কলকাতার আইকনিক স্টেডিয়ামটি। অনাকাঙ্খিত এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চান পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী। একই সঙ্গে সুষ্ঠ তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। শনিবার ভারতীয় সময় ঠিক সকাল ১১.৩০ মিনিটে যুবভারতীর মাঠে ঢোকে মেসির গাড়ি। তার সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ় এবং রদ্রিগো ডি’পল। ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা দেখে উচ্ছ্বসিত দেখায় মেসিকে। তবে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু মানুষ ঘিরে ধরেন তাকে। ফলে গ্যালারি থেকে শুধু মেসিকে নয়, লুইস সুয়ারেজ এবং রদ্রিগো ডি’পলকেও দেখা যায়নি। মেসি যুবভারতীতে পৌঁছাতেই অন্তত ৭০৮০ জন মানুষের ভিড় ঘিরে ধরে তাকে। মূলত মন্ত্রী, কর্তারাই ঘিরে ধরেন মেসিকে। মেসি যে ১৬১৭ মিনিট মাঠে ছিলেন, সেই সময় গ্যালারি থেকে এক বারও দেখা যায়নি তাকে। আর্জেন্টিনার তারকা মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মোটা টাকায় টিকিট কিনে মাঠে এসেও মেসিকে দেখতে না পাওয়ায় ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শুরু হয় গ্যালারিতে লাগানো হোর্ডিং ভাঙচুর। পরে গ্যালারির চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়তে শুরু করেন ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। মাঠে পড়তে শুরু করে বোতল। এই সময় গ্যালারিতে কোনও পুলিশ কর্মীকে দেখা যায়নি। মেসিকে দেখতে না পাওয়ার হতাশায় ক্রমশ বাড়তে থাকে উত্তেজনা। ফুটবলপ্রেমীরা আবার মাঠে ফিরে আসেন। সব মিলিয়ে যুবভারতী রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। এক সময় মাঠের ধারে ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে হুহু করে মাঠে লোক ঢুকতে শুরু করে। প্রথমে পুলিশ ছিল দিশাহারা। কিছুটা পর সম্বিত ফেরে পুলিশকর্মীদের। লাঠি উঁচিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে তাড়া করে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দর্শকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতা ও অভিনেতারা মেসিকে ঘিরে থাকায় ফুটবলের মহাতারকাকে দেখতে পায়নি কেউ। আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে ঘিরে থাকা বিশাল দলবলের জন্যই তাকে দেখতেই পারেননি গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় তাণ্ডব। অনেকে সিট উপড়ে ফেলে মাঠের দিকে ছুঁড়ে মারেন, বোতল ছুঁড়ে মারেন, অনেকে আবার মাঠে ঢুকে পড়েন এবং মঞ্চ ভেঙে ফেলেন। অনেকেই বলেন,দর্শকদের ক্রোধ ‘অনৈতিক’ নয়। যুবভারতীতে মেসির সফর ঘিরে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে সবচেয়ে সস্তার টিকিটের দামই ছিল চার হাজার টাকার উপর। বিশ্বজয়ী ফুটবলারকে সামনে থেকে এক বার চোখের দেখা দেখবেন বলে ভক্তেরা টিকিটের দামে বাছবিচার করেননি। কেউ ১০ হাজার, কেউ ১৫ হাজার, কেউ ৩০ হাজার টাকা দিয়েও টিকিট কেটেছেন। ভেঙে ফেলেছেন কয়েক বছরের সঞ্চয়! কিন্তু মেসিকে এক ঝলকও দেখতে পেলেন না গ্যালারি থেকে। মাঠে যতটুকু সময় মেসি ছিলেন, তাকে ঘিরে রাখা হয়েছিল। মেসি এমনিতেই ছোটখাটো চেহারার। তার উপর তাকে ঘিরে রেখেছিলেন কিছু রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তারক্ষী। ‘টলিউডের প্রতিনিধি’ হিসাবে মেসির সঙ্গে দেখা করারা সুযোগ পেয়েছিলেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে এমন তুলকালাম কাণ্ড স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব ফুটবলে নজর কেড়েছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর হয়েছে। নিজের রাজ্যে এমন ঘটনায় বিব্রত মমতা ব্যানার্জী। ঘটনার পরপরই দুঃখ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বার্তা দেন তিনি। ‘আজকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যে অব্যবস্থাপনা দেখেছি, তাতে আমি ভীষণ বিরক্ত ও বিস্মিত। হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমি ও ভক্ত, যারা তাদের প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসির এক ঝলক দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল, তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমি লিওনেল মেসির কাছে, একই সঙ্গে সব ক্রীড়াপ্রেমি ও মেসির ভক্তদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিশৃঙ্খলার সুষ্ঠ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। ‘এই কমিটি পুরো ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করবে, দায়ীদের চিহ্নিত করবে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন প্রতিরোধ করা যায়, সেই লক্ষ্যে করণীয় সুপারিশ করবে।’ কলকাতায় নিজের ৭০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন মেসি। হোটেল থেকে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতার লেক টাউনে নিজের ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন তিনি। মেসির এই সফরের যারা আয়োজক, তাদের মন্তব্যের জন্য রয়টার্স যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি। ঘটনার কিছুক্ষণ পর মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে বিমানবন্দর থেকে আটক করে পুলিশ। কলকাতার পাশাপাশি হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও দিল্লিতে কনসার্ট, যুব ফুটবল ক্লিনিক, খালি পায়ের ফুটবল টুর্নামেন্টে এবং দাতব্য উদ্যোগ উদ্বোধনের কথা রয়েছে মেসির। কলকাতার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামলে লিওনেল মেসি গেছেন হায়দরাবাদে। বলা যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বিশৃঙ্খলায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন মেসি। কলকাতা থেকে দুপুরের বিমানে রওনা হয়ে বিকেলে হায়দরাবাদ পৌঁছে যান তিনি। সেখানে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৫৩ মিনিটে মোট আটটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা তার। কলকাতায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হয়েছে হায়দরাবাদ পুলিশ। স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান শেষ করে রাত ৯টা নাগাদ মেসি যাবেন ফলকনামা প্যালেসে। সেখানে বাছাই করা খ্যাতনামীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত ছাড়াও তেলুগু সিনেমার প্রথম সারির তারকাদের অনুষ্ঠানে থাকার কথা। সেখানেই নৈশভোজ সারবেন মেসি। রাতে থাকবেন হায়দরাবাদেই। রোববার মুম্বাই এবং সোমবার দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে মেসির।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবধির শর্ট-পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সম্পন্ন
পরবর্তী নিবন্ধনিরব স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে কোয়ালিটি