নগরীর দর্জিপাড়া খ্যাত খলিফাপট্টিতে দিনরাত সেলাই মেশিনের খটখট শব্দের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। সিরাজদৌল্লা রোডের সাব এরিয়া বাজার সংলগ্ন খলিফাপট্টিতে সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগে দর্জিদের ব্যস্ততা শুরু হয়। খলিফাপট্টির দর্জিরা শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে নগরী এবং নগরীর বাইরের বিভিন্ন মার্কেটে পাইকারিতে তা বিক্রি করেন। তবে কিছু কিছু কারখানা অগ্রিম অর্ডার নিয়েও কাজ করে বলে জানান কারখানা মালিকেরা।
গতকাল সরেজমিনে খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আবার সেলাই করার কাপড়ে নানা ধরনের পুঁতি ও লেইস সংযুক্ত করছেন। আমিন উদ্দিন নামের একজন দর্জি জানান, এই সময়ে অনেকে জামা অর্ডার করছেন। তাই কাজের চাপ একটু বেশি। তিনি জানান, খলিফাপট্টিতে লেডিস জামা কাপড় প্রায় ৮৫ শতাংশ, বাকি ১৫ শতাংশ জেন্টসের।
খলিফাপট্টির কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা সারাবছর রমজানের ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখানে সারাবছর যত কাজ হয়, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদকেন্দ্রিক। খলিফাপট্টির কারখানাগুলোতে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা জামাও তৈরি হতো। দেশি ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের স্যুট, শার্ট, প্যান্ট, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ও স্কার্ট তৈরি করে থাকেন খলিফাপট্টির ডিজাইন মাস্টাররা। খলিফাপট্টির এসএস গার্মেন্টেসর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইয়ামিন বলেন, জিনিসপত্রের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তাই আগের চেয়ে লাভ কমে গেছে।
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমাম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, খলিফাপট্টিতে এখন দিনরাত কাজ চলছে। আমাদের এখন ভারতীয় পোশাকের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের পোশাকের মান ভারতীয় পোশাকের চেয়ে কোনো অংশেই খারাপ না। তবে এটি ঠিক যে, এখন জামা কাপড় তৈরির অনেক উপকরণের দাম বেড়েছে। তারপরেও সব মিলিয়ে আমাদের বেচাবিক্রি মোটামুটি বলা চলে। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে ২৫০টি কারখানা এবং ৯৫টির মতো শো–রুম রয়েছে। সরকার যদি ছোট ছোট কারখানাগুলোকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারতো। এতে অর্থনীতির চাকাও সচল হতো। একইসাথে বিদেশি জামা কাপড়ের ওপর নির্ভরশীলতাও কমতো।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের পর আইয়ুব আলী নামের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক ফেরিওয়ালা নিজের গ্রামের কিছু লোকজন এনে খলিফাপট্টিতে কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই শুরু। বর্তমানে খলিফাপট্টিতে প্রায় আড়াইশ কারখানা রয়েছে। পুরনো বেশ কয়েকটি ভবন জুড়ে রয়েছে কারখানাগুলো। প্রায় সবগুলো কারখানার শ্রমিক হচ্ছে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার।