রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের আতুড়ঘর। কত দল যে এই মাঠে অনুশীলন করতো তার কোনো হিসেব নেই। একটা সময় ছিল যখন খেলোয়াড়দের পদভারে মুখর থাকতো ঐতিহ্যবাহী এই মাঠ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এই মাঠে থেকে হারিয়ে যায় খেলাধুলা। দখল করে নেয় মেলা আর নানা অনুষ্ঠান। গত প্রায় দেড় দশক ধরে এই মাঠে খেলাধুলার চাইতে মেলা হয়েছে বেশি। বছরে অন্তত তিনটি মেলা হতো এই মাঠে। যে মেলাগুলো খেয়ে ফেলতো অন্তত বছরের নয় মাস। শুধু যে সময় খেয়ে ফেলতো তা কিন্তু না। মেলা শেষে মাঠটি হয়ে পড়তো একেবারে হতশ্রী। যত্র তত্র খোড়াখুড়ি, ইট ফেলে চলাচলের রাস্তা নির্মাণ, বড় বড় প্যাভেলিয়ন আর স্টল নির্মাণে মাঠকে করা হতো ক্ষতবিক্ষত। ফলে এই মাঠে খেলাটা হয়ে পড়তো একরকম অসম্ভব। তার উপর গত প্রায় দেড় দশকে এই মাঠে বড় কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি কেউ–ই। অথচ এক সময় কত টুর্নামেন্ট হতো এখানে। গত বছর কিছু খেলাধুলা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো স্থায়ী হতে পারেনি। এই রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠকে কিভাবে খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে একটি পরিকল্পনাও গ্রহণ করতে চেয়েছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং তৎকালীন রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু রেলওয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাধায় সেটাও আলোর মুখে দেখেনি। ফলে এই মাঠে আর খেলাধুলার সম্ভাবনাকে একরকম কবর দিয়ে দিয়েছিল স্থানীয় শিশু–কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাবগুলো।
কিন্তু হঠাৎ করেই এই মাঠকে যারা একরকম খেলাধুলার জন্য নিষিদ্ধ করেছিল তারা যেন ইউ টার্ন দিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে হঠাৎ করেই সুর পাল্টে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত কয়দিন থেকে এই মাঠের প্রবেশ পথে একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে ‘রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ কেবলই খেলার জন্য সংরক্ষিত’। এই সাইনবোর্ডটি দেখে অনেকে বিদ্রুপ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার পলোগ্রাউন্ড মাঠে গিয়ে দেখা যায় এই সাইনবোর্ড দেখে অনেকেই নানা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন। আবার অনেকেই প্রশংসা করছেন। তারা বলেন, যাক পট পরিবর্তনে রেলওয়ে কর্মকর্তারা নিজেদের মত পরিবর্তন করেছেন যা খেলাধুলার জন্য লাভ হবে। যদিও মাঠটি এখনো খেলাধুলার উপযোগী নয়। সেই যে কবে একটি মেলা শেষ হয়েছে, অথচ এখনো মাঠে রয়ে গেছে ইট, পাথর সহ নানা সামগ্রী। মাঠের বিভিন্ন স্থানে রয়ে গেছে বালির স্ত্তূপ। তারপরও মাঠে রেলওয়ের টানানো এমন সাইনবোর্ড দেখে উচ্ছ্বসিত শিশু–কিশোররা। কিছুদিন আগেও যারা এই মাঠে নামতে পারতো না এখন তারা অনায়াসেই খেলতে পারবে। তবে তার আগে মাঠটা সংস্কার চায় শিশু–কিশোর থেকে শুরু করে এলাকার তরুণ–যুবকরা।
চট্টগ্রামে মাঠের এখন বেশ সংকট। যে সমস্ত ক্লাব জেলা ক্রীড়া সংস্থায় খেলে বা জেলা ক্রীড়া সংস্থার বাইরে রয়েছে তাদের অনুশীলনের জন্য ঘুরতে হয় শহরের এই প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে একসাথে অন্তত তিন থেকে চারটি দল অনুশীলন করতে পারে। তাই এই মাঠটি যদি সত্যিকার অর্থে খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত হয় তাহলে সেটা হবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় একটি সুখবর। এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ এখন শুধু খেলার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। আপাতত এখানে কোনো মেলা চলবে না। শুধু খেলার জন্য সংরক্ষিত থাকবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক ক্রীড়াবিদ। তাদের প্রত্যাশা এবার অন্তত মাঠটাকে খেলাধুলার উপযোগী করে দেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যাতে করে অতীতের মত আবারো খেলোয়াড়দের পদভারে মুখরিত হয় এই মাঠ। তবে আর কোনো মেলা দেখতে চান না ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক থেকে শুরু ক্রীড়ামোদী সবাই।