সাঙ্গ হলো খেলা, ভাঙলো মিলনমেলা। নিয়মানুযায়ী গতকাল ছিল জব্বার মিয়ার বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলার শেষ দিন। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসা দোকানিরা পাট গুটাতে গুটাতে কেটে যাবে আরও তিন/চার দিন। নগরায়ণের থাবায় লোকজ রীতিনীতি, আচার–অনুষ্ঠান লোপ পেলেও জব্বারের বলী খেলা বিলুপ্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে। শতাব্দী পুরনো এ মেলা চট্টগ্রামের জনসাধারণের বর্ণিল জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
বলী খেলাকে ঘিরে এক সময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিকতা থাকলেও বর্তমানে দেশব্যাপী এ বলী খেলার প্রচার থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকেও বলীরা এতে অংশ নেন। বর্তমানে চট্টগ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। আয়োজনটি নগরবাসীকে বিরাট আনন্দের উপলক্ষ এনে দেয়। বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই শহরের সর্বত্র শুরু হয়ে যায় বলী খেলার আলোচনা। তবে এটাও সত্য যে, বলী খেলার আগের সেই চেহারা নেই, কিন্তু এ খেলা এবং খেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মেলা নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস এতটুকু কমেনি।
জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলার শেষ দিন গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি স্টলের সামনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে মানুষ আর মানুষ।
ঢাকা, ফেনী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। বিশাল এলাকা জুড়ে বসে কয়েক হাজার দোকান। বিক্রি হয় হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ ও বেতের নানা তৈজসপত্র, কাঠের পুতুল, নকশি কাঁথা, প্লাস্টিক সামগ্রী, নানা ধরনের ফলদ, ওষুধি ও বনজ গাছ ইত্যাদি। আরও ছিল নিত্য ব্যবহার্য সব সামগ্রী আর ঘর সাজাবার নানান উপকরণ।
শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায় লোকজনের ভিড়। ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি চলে বিকিকিনি। আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কোতোয়ালী, শাহ আমানত মাজার এলাকা থেকে সিনেমা প্যালেস–কোথাও ফাঁকা নেই। সবখানে হাজার হাজার মানুষ। নারী–পুরুষ–শিশু একাকার হয়ে গেছে। শেষ দিনে মেলায় আসা প্রত্যেকে কিছু না কিছু কিনেছেন। বিশেষ করে ঝাড়ু, সাধারণ পাটি, শীতল পাটি, ফুলের টব, মাটির কলসি, পানি রাখার মাটির জগ, পাপোষ, দা, বটিসহ কামার শিল্পের তৈজসপত্র, মাটির ব্যাংক কিনেছেন বেশিরভাগ মানুষ। মেয়েরা তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করেছেন। চুড়ি, ইমিটেশনের পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। শিশুদের খেলনাও বিকিকিনি হয়েছে দেদারছে। মেলায় আসা সব ধরনের পণ্যই বিকিকিনি হয়েছে। খাবারও বিক্রি কম হয়নি। জিলাপি, চনা–মনার ঠ্যাং, চালের জিলাপিসহ সব ধরনের খাবার বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মেলায় বিশেষ করে প্রায় প্রতিজনের হাতেই দেখা গেছে ঝাড়ু। লোকজন একেবারে এক বছরের জন্য ঝাড়ু কিনে নিয়ে রাখেন মেলা থেকে। একারণে ঝাড়ুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। অনেকে ১০টি পর্যন্ত কিনে নিয়েছেন ঝাড়ু। শেষ দিনে দাম খুব একটা বেশি ছিল না। বিক্রেতারা প্রথমে দাম বেশি হাঁকলেও পরে দর কষাকষি করে ন্যায্য দামে কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা। ফিরিয়ে নেয়ার চাইতে কম লাভে ছাড়াই ভাল–এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন দোকানিরা।
মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী আজাদীকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বলি খেলা ও মেলা শেষ করতে পেরেছি। কোথাও কোন ধরনের সমস্যা হয়নি।
সাতক্ষীরা থেকে আসা ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন জানান, এবার ভালো লাভ করেছি। তিনদিন পেয়েছি, কোন বৃষ্টি ছিল না। আরো দুই/তিন দিন থাকার ইচ্ছে আছে, যদি সুযোগ পাই। পরের বছর আবার আসবেন বলে জানান তিনি।