নিতিশ কুমার রেড্ডিকে দারুণ কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারিতে পাঠালেন স্টিভেন স্মিথ। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল মেলবোর্ন স্টেডিয়ামের ঠাসা গ্যালারি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ব্যাট–হেলমেট উঁচিয়ে ধরে কয়েকবার মাথা ঝাঁকিয়ে দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিলেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটসম্যান। এরপর চুমু আঁকলেন হেলমেটে। স্মিথের চমৎকার ইনিংসের সুবাদে বক্সিং ডে টেস্টে ৪৭৪ রানের বিশাল পুঁজি গড়ল অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষের রান পাহাড়ের জবাব ভালোই দিচ্ছিল ভারত। কিন্তু শেষ বেলায় ৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে দ্বিতীয় দিন শেষ করল তারা ৫ উইকেটে ১৬৪ রান নিয়ে। টেস্টে ২৫ ইনিংস ধরে সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না স্মিথ। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে এবার তিন ইনিংসে উপহার দিলেন দুটি শতক। ব্রিজবেনে ১০১ রানের পর মেলবোর্নে খেললেন ৩ ছক্কা ও ১৩ চারে ১৪০ রানের চমৎকার ইনিংস। স্মিথের টেস্টে এটি ৩৪তম সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৮তম। আর মেলবোর্নে পঞ্চম। ভারতের বিপক্ষে ৪৩ ইনিংসে এনিয়ে ১১ বার তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন তিনি। উপমহাদেশের দেশটির বিপক্ষে তার চেয়ে বেশি শতক নেই আর কারও। ৫৫ ইনিংসে ১০ সেঞ্চুরি করে তালিকায় দুইয়ে ইংল্যান্ডের জো রুট।
জবাব দিতে নেমে ইয়াশাসভি জয়সওয়াল ও ভিরাট কোহলির ১০১ রানের জুটিতে বেশ ভালো অবস্থায় ছিল ভারত। হুট করে ছোটখাটো ব্যাটিং ধসে ২ উইকেটে ১৫৩ থেকে তাদের রান হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১৫৯। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ১ ছক্কা ও ১১ চারে ৮২ রান করে ফেরেন জয়সওয়াল। কোহলি থামেন ৩৬ রান করে। অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন রিশাভ পান্ত ও রবীন্দ্র জাদেজা। ৬ উইকেটে ৩১১ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। আগের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান স্মিথ ও প্যাট কামিন্স ভালোভাবেই পার করেন প্রথম ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ। দুইজনের ব্যাটে প্রায় সমানতালে আসতে থাকে রান। আগের দিন অভিষিক্ত স্যাম কনস্টাসের বিপক্ষে বেদম পিটুনি খাওয়া জাসপ্রিত বুমরাহকে ছক্কায় উড়িয়ে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান ৬৮ রান নিয়ে খেলতে নামা স্মিথ। কয়েক ওভার পর নিতিশকে চার মেরে ৯৯ থেকে কাঙ্ক্িষত ঠিকানায় পৌঁছে যান তিনি, ১৬৭ বলে। কামিন্সকে হাতছানি দিচ্ছিল ফিফটি। কিন্তু জাদেজার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি ৭ চারে ৪৯ রান করে। ভাঙে ১১২ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান বাড়ানোয় মনোযোগ দেন স্মিথ। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন মিচেল স্টার্ক। লাঞ্চের পরের দুই ওভারে বিদায় নেন দুইজনই। স্টার্ককে বোল্ড করে দেন জাদেজা। আর আকাশ দিপের বলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে উইকেট হারান স্মিথ। আকাশকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। বল তার ব্যাটে লেগে পায়ের নিচের অংশে আঘাত হানে। সেখান থেকে কয়েক ড্রপে ছোবল দেয় স্টাম্পে! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেলস পড়া দেখেন স্মিথ। কিছুক্ষণ মাথা নুইয়ে ব্যাটে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ক্রিজে। কয়েক ওভার পর গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া ইনিংস। ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই রোহিত শার্মাকে হারায় ভারত। সিরিজে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নেমে ভারত অধিনায়ক ফেরেন স্রেফ ৩ রানে। তাকে বিদায় করে একটি কীর্তি গড়েন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে এ নিয়ে পঞ্চমবার ভারত অধিনায়ক রোহিতকে আউট করলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে কোনো অধিনায়ক আরেক অধিনায়ককে এর চেয়ে বেশিবার আউট করতে পারেননি। এরপর প্রতিরোধ গড়েন জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। তাদের জমে ওঠা ৪৩ রানের জুটি ভাঙে কামিন্সের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রাহুল স্টাম্প হারালে। এরপর দলকে টানেন কোহলি ও জয়সওয়াল। দুইজনেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে বাড়াতে থাকেন রান। মনে হচ্ছিল, তাদের জুটিতেই দিন পার করে দেবে ভারত। কিন্তু শেষ বেলায় গড়বড় পাকিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন ৮১ বলে ফিফটি ছোঁয়া জয়সওয়াল। এক ওভার পর স্কট বোল্যান্ডের অফ স্টাম্পের বাইরে বল খেলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন কোহলি। নিজের পরের ওভারে বোল্যান্ড ফিরিয়ে দেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা আকাশকে।