প্রকৃতির অন্যতম নিসর্গ বাঁশখালী। এখানে পূর্বে পাহাড় ,পশ্চিমে সমুদ্র আর মাঝখানে সমতল ভুমি। এখানে সারাবছর সবজি ফলানো সম্ভব, আর নানা ফসলের পাশাপাশি পশ্চিমে সমুদ্র উপকূলকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন- উপকূলীয় এলাকায় আধুনিক বেড়িবাঁধ হয়েছে। মেরিন ড্রাইভের পরিকল্পনা চলছে। মীরসরাই ও সীতাকুন্ডের পর এই বাঁশখালীকে অর্থনৈতিক জোনে পরিণত করার সকল ধরনের উপযোগিতা রয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক ও শিল্পজোন হলে এখানকার জনগণ আর কর্মহীন থাকবে না। গত ২৭ অক্টোবর বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাঁশখালী উপকূলবাসী আরো একধাপ স্বপ্নে পুরণে এগিয়ে যাবে। বর্তমানে বাঁশখালীর গন্ডামারায় চীন-বাংলাদেশের সহযোগিতায় এস আলম গ্রুপ স্থাপন করছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের অন্যান্য শিল্পগ্রুপগুলো বাঁশখালীর উপকুলে তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান করার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাধা ছিল উপকুলীয় বেড়িবাঁধ। এখন সেই বাধাও দূর হচ্ছে।
বন্যা ও সাগরে অতিরিক্ত জোয়ার ভাটার কারণে দু,দফায় সময় বৃদ্ধির পর এ কাজের প্রায় ৮৮% কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশখালীতে দায়িত্বরত উপ প্রকৌশলী ধীমান কৃঞ্চ চৌধুরী ও মো:আবু তাহের। তারা জানান- বাঁশখালীর উপকুলীয় স্থানীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রথমে ২৫১ কোটি বরাদ্দ দেয়া হলেও তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৯৩ কোটি হয়। এরমধ্যে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে চট্টগ্রামের মীরসরাইর জোরারগঞ্জ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জোরারগঞ্জ থেকে শুরু করে মীরসরাই-সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ধরে বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে এবং সেখান থেকে বাঁশখালী উপকুল ও চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে সড়কটি। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল ব্যবহার করা হলেও মাতামুহুরিসহ অন্যান্য নদীগুলোর উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। জানা যায়- গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পটির সার্ভে শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হওয়ায় উপকুলীয় জনগণ পুর্বের শংকা কাটিয়ে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে উপকুলীয় এলাকার জনগণ সাগরে হারিয়ে যাওয়া তাদের সম্পত্তিগুলো পুন:উদ্ধারে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি শুরু করেছে ।
গন্ডামারা ছাড়াও বাঁশখালীর সর্বদক্ষিণে ছনুয়ায় ইতিমধ্যে উপকুলীয় এলাকায় শিল্প স্থাপনের জন্য দেশের এক শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রায় ২শত একর জায়গার জন্য বায়না করেছে বলে জানা গেছে। উপকুলীয় সরল, বাহারছড়া, কাথরিয়া, খানখানাবাদ এলাকার বেশ কিছু জায়গা কিনে নিচ্ছে প্রায় ৮টি শিল্পগ্রুপ। সরলের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন- উপকুলের জনগণ একসময় ভাঙ্গনের ভয়ে এলাকায় আসত না, এখন সেখানে নতুন বসতি করে জায়গার দাম পাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ছনুয়ার চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশিদ বলেন- বেড়িবাঁধ ও মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ হলে বাঁশখালী উপকুলের কোন জায়গায় খালি থাকবে না। বাহারছড়ার চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন- বেড়িবাঁধ হওয়ায় উপকুলীয় এলাকায় জনগণ নতুন নতুন বাড়িঘর তৈরি করছে। মেরিন ড্রাইভ হলে বাঁশখালীর উপকুল হবে শিল্পনগর, হবে কর্মসংস্থান। খানখানাবাদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন- বেড়িবাঁধ হওয়ায় এলাকার জনগণ নতুন করে নানামুখী ফসল ফলাচ্ছে জমিতে। এরমধ্যে মেরিন ড্রাইভ হলে এলাকায় উন্নয়ন ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে, জনগণ কর্মহীন থাকবে না।