দেশের প্রথম ‘ওশ্যান অ্যান্ড এমিউজমেন্ট সিটি’ গড়ে উঠবে চট্টগ্রামে। নগরের উত্তর কাট্টলীর আউটার রিং রোডের পাশে ৩০ একর জায়গায় পার্কটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পরামর্শে স্কেচ তৈরির কাজ করছে সংস্থাটি। এর আগে প্রকল্প বাস্তবায়নে উত্তর কাট্টলী মৌজায় ভূমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসককে আধা-সরকারি একটি পত্র দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
পার্কটি গড়ে উঠলে সমুদ্রের তলদেশের লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা। একইসঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম মেরিন এমিউজমেন্ট সিটি হবে বলেও দাবি চসিকের। বিওটি (বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে দেশীয় এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যৌথ অর্থায়নে ‘ওশ্যান অ্যান্ড এমিউজমেন্ট সিটি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় চসিক। ইতোমধ্যে দেশের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান এবং চীনের একটি প্রতিষ্ঠান চসিককে প্রস্তাবও দিয়েছে। তাই ভূমি বরাদ্দ পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক সংকট হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ওশ্যান অ্যান্ড এমিউজমেন্ট পার্কের জন্য ভূমি বরাদ্দ চেয়ে আধা-সরকারি পত্র দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে। এছাড়া এ বিষয়ে একাধিকবার মৌখিক আলোচনাও করেছেন উভয়ে। এছাড়া ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন মেয়র। তারাও ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে সিটি মেয়রকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে আশ্বস্ত করেন। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক স্কেচসহ প্রস্তাব দিতে বলেন। প্রস্তাবনাটি পেলে তা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে জেলা প্রশাসককে দেয়া আধা-সরকারি পত্রে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওশ্যান অ্যান্ড এমিউজমেন্ট সিটি বা পার্ক বাস্তবায়নে ২০-৩০ একর জমি প্রদানের শর্তে বিনিয়োগের ইচ্ছে পোষণ করেছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের এত বড় স্থাপনা করার মত নিজস্ব জায়গা নেই। তাই জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন (আউটার রিং রোডের পাশে, সমুদ্রের পাশে) উত্তর কাট্টলী মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত বিএস ২নং দাগের অন্তর্ভুক্ত ৩০ একর জায়গা ওশ্যান এমিউজমেন্ট পার্কের জন্য বরাদ্দ চান মেয়র।
পত্রে আরও বলা হয়, জায়গা বরাদ্দ পেলে আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বানপূর্বক বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যা হবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম মেরিন এমিউজমেন্ট সিটি।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে গত সপ্তাহে কথাও হয়েছে। তিনি খুব আন্তরিক। জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এখন তিনি জায়গার স্কেচসহ আবার প্রস্তাবনা পাঠাতে বলেছেন। প্রস্তাবনা পেলে তিনি তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন। জেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী স্কেচ করে আমরা দ্রুত পাঠাবো।
মেয়র বলেন, ভূমি মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনিও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশংসাও করেছেন। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি কারো মধ্যেই আন্তরিকতার অভাব দেখিনি। তাই আশা করছি জায়গা অধিগ্রহণ কঠিন হবে না।
মেয়র বলেন, জায়গা যদি কনফার্ম করতে পারি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। দেশীয় এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পার্কটি করার ব্যাপারে আগ্রহও দেখিয়েছে। কাজেই ভূমি পেলে পার্কটি গড়ে তোলা কঠিন হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, পার্কটি হলে নতুন একটি কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামে। এখানে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষণীয় বিষয়ও থাকবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে নতুন কিছু উপহার দিতে চায়। রাস্তাঘাট সংস্কার, নালা-নর্দমা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ও আলোকায়ন করা, এসব তো আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। সেগুলো তো করে যাচ্ছি। সামনেও করবো। এর মাঝেও নতুন কিছু করার চিন্তা থেকে ওশ্যান পার্কের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, পার্কটি করতে পারলে পুরো বাংলাদেশেই অনন্য চমক সৃষ্টি করবে চট্টগ্রাম। এ ধরনের পার্ক প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নাই। এটি করতে পারলে শুধু দেশ থেকে নয় বিদেশি পর্যটকরাও ছুটে আসবেন চট্টগ্রামে। এখানে পাহাড়-নদী-সমুদ্রের অপূর্ব মেলবন্ধন রয়েছে। পাশাপাশি একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি এবং অপরদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কঙবাজার রয়েছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম শহরে সন্নিহিত পর্যটন সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারলে বন্দর ভিত্তিক বাণিজ্যিক আয়ের পাশাপাশি পর্যটনের মাধ্যমে এতদঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরো কার্যকরভাবে বাস্তব রূপ দেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীও তার সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে এ অঞ্চলে অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন এবং উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। নির্মাণাধীন কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল এবং প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভ (কঙবাজার থেকে সমুদ্র উপকূল ঘেষে মিরসরাই হয়ে আবার চট্টগ্রাম) পর্যটনের সম্ভাবনাকে নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করবে। এরই অংশ হিসেবে নগরের সর্ববহৎ সেবা সংস্থার কর্ণধার হিসেবে সমুদ্র কূল ঘেষে এমিউজমেন্ট সিটি বা পার্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।