চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, বন্দরের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে দেশের প্রবৃদ্ধি। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সব আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আমাদের সক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতে হবে, নাহলে উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। বন্দরকে কত গতিশীল করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা সবসময় কাজ করবো। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি শতভাগ অটোমেশনে যেতে পারি তাহলে আন্তর্জাতিক বন্দরের স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করতে পারবো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর আদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো বা পোর্ট সিঙ্গেল উইন্ডো করবে। আগামী ৩–৪ বছরের মধ্যে আমাদের কন্টেনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২–৩ মিলিয়ন টিইইউস বাড়াতে হবে। তাই আমরা বে টার্মিনালের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করেছি। সেখানে আমরা ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। বিশ্বব্যাংক যে আমাদের ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের কমিটমেন্ট করেছে, এঙেস চ্যানেল, নেভিগেশন চ্যানেল এবং ব্রেক ওয়াটার করার জন্য সেই কাজটা আমরা এখন দ্রুতগতিতে ফাস্ট ট্র্যাকে করছি। আশা করি আগামী মার্চ–এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাবে। তারপর ইনশাআল্লাহ বে টার্মিনালের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। যাতে ২০২৮–২৯ এর মধ্যে আমরা এ কাজটা শেষ করতে পারি। ডিপিপি অনুমোদন হলে চুক্তি হবে। মাতারবাড়ীতে ইতিমধ্যে বন্দরের উন্নয়নের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেটা সরকার অনুমোদন করেছে। এ কাজটা ফাস্ট ট্র্যাকে করছি। ২০২৮ এর মধ্যে এটা শেষ হওয়ার আশা করছি।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, কন্টেনার জট কমাতে রেলওয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত আগস্ট মাসে বন্দরে কন্টেনার ছিল সাড়ে ৪৫ হাজার টিইইউস, এখন তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনতে পেরেছি। নরমাল অপারেশনের পাশাপাশি জট ক্লিয়ার করা সহজ ছিল না। রেলওয়ে, কাস্টমস এবং আমরা সম্মিলিতভাবে করেছিলাম বলে সম্ভবপর হয়েছিল। আমরা যদি একসাথে কাজ করি তাহলে বড় ধরনের কাজ করে ফেলতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এ আস্থা আমরা অর্জন করেছি, এটা ধরে রাখতে হবে। কেউ যেন বন্দরকে ক্ষুদ্র স্বার্থে অপব্যবহার করতে না পারে। সেদিকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র স্বার্থ বড় স্বার্থকে বিপন্ন করতে পারে। আশা করি ২০২৫ সাল আরও অর্থবহ হবে।
তিনি আরো বলেন, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) রপ্তানির কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে। স্ক্যানারের সমস্যার কারণে ইমপোর্ট হ্যান্ডলিং করতে পারছে না। এনবিআর স্ক্যানারের পারমিশন দিয়েছে, কিনতে সময় লাগবে। উনাদের ক্রেন ও অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট অল্পদিনের মধ্যে চলে আসবে। তখন ইমপোর্ট কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারবে। আমাদের লস নেই। কারণ পয়েন্ট ফাইভ মিলিয়ন টিইইউসের যে ক্যাপাসিটি চার্জ তা আমরা পাচ্ছি। সেটা তারা পরিশোধ করছে। উনাদের হ্যান্ডলিং হোক বা না হোক আমাদের লাভ। ভবিষ্যতে হয়তো বা উনারা ওভারকাম করবে। আমরা লালদিয়ায় ইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি করছি। বে টার্মিনাল এলাকায় আমরা ট্রাক টার্মিনাল করছি। এছাড়া বড় জাহাজ আনার উদ্যোগ নিচ্ছি। ছোট জাহাজ একটু কমিয়ে দিতে চাই। এক জাহাজে ২৫০০ টিইইউস আনলে ১২০০ টিইইউসের ২টি জাহাজ আসতে হবে না। অফডকগুলো আমাদের চালু করতে হবে। এফসিএল কন্টেনার অফডকে নিতে পারি তাহলে ১ মিলিয়ন টিইইউস সক্ষমতা বেড়ে যাবে। ওপেন আইজিএম করার চিন্তাভাবনা করছি। যাতে পানগাঁও এবং অন্যান্য জায়গায় অপারেশন সহজ করতে পারি। সুন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ৪–৫ বছর সমস্যা হবে না। অপারেশন টপ প্রায়োরিটি দিচ্ছি। প্রযুক্তি আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কাস্টম, এনবিআর, পোর্ট, ব্যাংক ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যদি কাজ করতে পারি, পেপারলেস যদি করতে পারি তাহলে সব ফাস্ট হয়ে যাবে। আমরা আইএসপিএস কোডের কমপ্লায়েন্স আমরা শতভাগ মেনে চলি। কিছুদিন আগে অডিট হয়েছে। তারা খুবই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ইউএস কোস্টগার্ড এ মাসে আসবে। উনারাও অডিট করবে। তারা আমাদের গাইডলাইন দেবে।