মেরামত শেষে চালুর উপযোগী সিইউএফএল

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি উৎপাদনে যাওয়ার আশা গ্যাস সংকটে থাকছে সংশয়ও

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রায় তিন মাস পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে চালু হচ্ছে দেশের ইউরিয়া সার উৎপাদনের অন্যতম বৃহৎ কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। তবে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে কারখানাটি চালু করার উপযোগী করা হলেও চট্টগ্রামে গ্যাসের আকালের মাঝে শেষতক এটি উৎপাদনে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কারখানাটি অন্তত ৪শ’ কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতির কবলে পড়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও প্রায় ২শ’ কোটি টাকা। নানা ঝামেলা শেষে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরুর চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সিইউএফএল কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের লিপারমারে প্রাইমারি রিফরমারি ওয়েস্টেস বয়লারে গত ২২ নভেম্বর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে বয়লারের একেবারে ভিতরের পাতসহ নানা যন্ত্রপাতি পুড়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। কারখানার নিজস্ব প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিটাক কারখানাটি মেরামতের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল বলেন, সিডিউল অনুযায়ী মেরামত কাজ চলছে। আমরা সবকিছু খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের প্রকৌশলীরা রাতে দিনে নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমরা মধ্য ফেব্রুয়ারিতে কারখানাটি পুরোদমে চালু করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, কারখানাটি বেশ পুরানো। তাই বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা চারদিক সামাল দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানাটিকে চালু করার চেষ্টা করছি।

কারখানা কর্তৃপক্ষ সবকিছু গুছিয়ে আনলেও চট্টগ্রামে গ্যাসের যে আকাল তাতে সিইউএফএল ঠিকঠাকভাবে চালু করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। গ্যাসের আকাল না ঘুচলে সার উৎপাদন সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলেছে, সার কারখানায় গ্যাস শুধুমাত্র জ্বালানিই নয়, কাঁচামালও। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকেই ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। এতে করে গ্যাসের কোনো বিকল্পই সিইউএফএলএ নেই। দৈনিক কমপক্ষে ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস না পেলে এই কারখানায় সার উৎপাদন সম্ভব নয়। এখন মধ্য ফেব্রুয়ারি নাগাদ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সিইউএফএলকে দৈনিক ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে পারছে কিনা তা নিয়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।

সিইউএফএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

তবে গতকাল কর্ণফুলী গ্যাসের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামে গ্যাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য করে বলেছেন, এখন আমরা গড়ে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। যা থেকে সিইউএফএলকে ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তবে সরকারি সিদ্ধান্তে যদি গ্যাসের যোগান বাড়ে কিংবা কাফকোর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয় সেক্ষেত্রে সিইউএফএলকে গ্যাস দেয়া যাবে। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কপোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল কারখানাটি দৈনিক প্রায় ১ হাজার ১০০ টন ইউরিয়া এবং ৬০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে। এরমধ্যে ১ হাজার ১শ’ টন সারের বাজারমূল্য প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। কারখানার আ্যমোনিয়া প্ল্যান্টে উৎপাদিত দৈনিক ৬০০ টন অ্যামোনিয়ার বাজার দর প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে সিইউএফএল বন্ধ থাকায় দৈনিক উৎপাদন ক্ষতি সাড়ে ৬ কোটি টাকা। গত দুই মাসেরও বেশি সময়ে কারখানাটি অন্তত ৪শ’ কোটি টাকার ক্ষতির কবলে পড়েছে। মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ক্ষতির পরিমাণ ৬শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরস্কার পাওয়ার পর অনুভূতি
পরবর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৯ ফেব্রুয়ারি