মেরামত জটিলতায় বন্ধ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র, গ্যাসের যোগান সারে

উৎপাদনে যেতে সময় লাগবে তিন থেকে ছয় মাস

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মেরামত জটিলতায় বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র। মেরামতের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, যান্ত্রিক জটিলতা তৈরি হওয়ায় ১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহা ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্লান্ট এবং মেরামতের কারণে বন্ধ রয়েছে রাউজানের ১৮০ মেগাওয়াটের এক ইউনিট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেরামত শেষ হলে আগামী তিন থেকে ৬ মাসের মধ্যে প্লান্টগুলো উৎপাদনে আসবে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের দুই সার কারখানায় সরবরাহ বাড়িয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস।
সূত্রে জানা গেছে, মেরামত জটিলতার কারণে গত ২১ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ৫ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে ১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহা ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্লান্ট এবং ১২ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে রাউজানের ১৮০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট। শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের মেনটেনেন্স (রক্ষণাবেক্ষণ) সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে প্লান্টটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন মেনটেনেন্সের জন্য টেন্ডার হয়েছে। ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষর হলেই ঠিকাদার কাজ শুরু করবেন। কাজ শুরু করা গেলে অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে প্লান্টটি প্রস্তুত হতে।’
১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহা ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্লান্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৫০ মেগাওয়াটেও একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রায় মাস দুয়েক আগে ট্রিপ করার পর আর চালু করা হয়নি। প্লান্টটির নির্মাতাদের আমরা ডেকেছি। তারা বিষয়টি দেখছেন। তারা প্রস্তাব দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। ২২৫ মেগাওয়াট তারও আগে থেকে বন্ধ রয়েছে।’
রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘রাউজানের দুই ইউনিটের একটি চালু রয়েছে। অন্য ইউনিট প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এটাতে চীনের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। এটি উৎপাদনে আসতে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি লেগে যাবে।’ তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটিতে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও সার্বিক বিদ্যুৎ সঞ্চালনে কোন জটিলতা হবে না বলে দাবি এ প্রকৌশলীর। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা থাকছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। কিন্তু বর্তমানে সারাদেশে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।’
এদিকে গ্যাস নির্ভর বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের দুইটি সার কারখানায় সরবরাহ বাড়িয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের গ্যাস নির্ভর পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দৈনিক ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর ৩৭.৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে (কাফকো) ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও ২৫ অক্টোবর প্রয়োজন অনুযায়ী ৯১.৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানায় কমবেশি এভাবেই গ্যাস সরবরাহ করে আসছে চট্টগ্রামে গ্যাসের বিপণন সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে মহেশখালীর ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুইটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ এন্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) দিয়ে গত সপ্তাহে ৮০০-৮২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিয়ে আসছে আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড)। চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ বন্ধ করে দেয় সরকার।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী গ্যাসের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গ্যাসের সংকট থাকবে। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। একইসাথে চট্টগ্রামের দুই সার কারখানা সিইউএফএল এবং কাফকোতে তাদের চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধদীঘিনালায় ৩ ইউপিতে ১ নারী, ২ পুরুষ
পরবর্তী নিবন্ধ৪০ লাখ ৭০ হাজার টাকার ইয়াবা উদ্ধার