মেয়াদ শেষের ১০ দিন আগে নিলামে দেড় কোটি টাকার মহিষের মাংস

চট্টগ্রাম কাস্টমস কাল একইসাথে সামুদ্রিক মাছ, আদার নিলামও হবে

জাহেদুল কবির | বুধবার , ২২ নভেম্বর, ২০২৩ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জের উত্তর মাসদাইর গাবতলী এলাকার এমবি ট্রেডিং ভারত থেকে ২৮ হাজার ৪০ কেজি (২৮ টন) হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি করে। আমদানিকারক নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস না নেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কতর্ৃৃপক্ষ ৭ মার্চ কাস্টমসকে আরএল (নিলামে তালিকাভুক্ত) পাঠায়। পরে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২৯ মার্চ এসব পণ্যের ইনভেন্ট্রি সম্পন্ন করে।

ইনভেন্ট্রি সম্পন্ন করার প্রায় ৮ মাস পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিলামে চট্টগ্রাম কাস্টমস মহিষের মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে ১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ টাকা। এসব মাংসের উৎপাদনের তারিখ লেখা আছে ৪ ডিসেম্বর ২০২২ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা রয়েছে ২ ডিসেম্বর ২০২৩। সেই হিসেবে মহিষের মাংসের মেয়াদ আছে মাত্র ১১ দিন। কাল নিলাম হবে মেয়াদ থাকবে আর ১০ দিন।

এর আগে ৯ অক্টোবর একই আমদানিকারকের ২৭ হাজার ৯৮০ কেজি (প্রায় ২৮ টন) মহিষের মাংস নিলামে তুলে কাস্টমস। নিলামে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৩ টাকা দাম নির্ধারণ করলেও সর্বোচ্চ দাম উঠেছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। কেজি হিসেবে মাত্র ১৪ টাকা ২৯ পয়সা। রাজশাহীর শাহ মখদুম ট্রেডার্স সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়। এদিকে আগামীকাল মহিষের মাংস ছাড়াও ১০ হাজার ৬৭০ কেজি (সাড়ে ১০ টন) হিমায়িত সামুদ্রিক মাছ নিলামে তোলা হচ্ছে। ঢাকার রামপুরা বনশ্রীর এমএন কর্পোরেশন চালানটি আমদানি করে। নিলামে কাস্টমস সংরক্ষিত মূল্য ধরে ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৩৪২ টাকা। একইসাথে ৫২ হাজার ২৬০ কেজি (৫২ টন) রূপচাঁদা মাছও নিলামে তুলছে কাস্টমস। এসব মাছের মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ১৬ টাকা। মিয়ানমার থেকে পাথরঘাটা ইকবাল রোডের ফিশারিঘাটের মেসার্স রফিক এন্ড ব্রাদার্স এসব মাছ আমদানি করে। অপরদিকে ১৮ হাজার ৫৯০ কেজি (সাড়ে ১৮ টন) আদা নিলামে তোলা হচ্ছে একই দিন। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের আল হোছাইন ট্রেডিং চালানটি আমদানি করে। নিলামে কাস্টমস মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৩৫৭ টাকা।

নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, পচনশীল পণ্যের দ্রুত নিলাম আয়োজনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থায়ী আদেশ জারি করে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে সেই আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বিগত সময়ে অনেক খাদ্যপণ্য কন্টেনারে পচে যাওয়ায় তা মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব পাওয়া দূরে থাক, উল্টো পণ্য ধ্বংসের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।

কয়েকজন বিডার অভিযোগ করেন, পণ্যের ইনভেন্ট্রি শেষে ভ্যালুয়েশনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। ভ্যালুয়েশন নেওয়ার পর মূল্য নির্ধারণ কমিটি নিলামের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করে। পরে পণ্যের ক্যাটালগ প্রকাশ করে নিলাম আয়োজন করে সরকারি নিলামকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে এক মাস লাগতে পারে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মহিষের মাংস ইনভেন্ট্রি শেষ করার প্রায় ৮ মাস পর নিলামে তুলছে। অথচ এসব মাংসের মেয়াদ আছে আর মাত্র ১১ দিন।

এনবিআর থেকে জারি করা অখালাসকৃত বা চোরাচালানের অভিযোগে আটক ও বাজেয়াপ্তকৃত পণ্যের নিষ্পত্তি পদ্ধতি সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ২০২২ এ বলা হয়েছে, নিষ্পত্তিযোগ্য পচনশীল পণ্য হলে তা দ্রুত নিলামের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য নিলামের আয়োজন করতে হবে। কাস্টম হাউসের ক্ষেত্রে পণ্য গ্রহণের পরপরই কাস্টমস হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট/ডেপুটি কমিশনারের অনুমতিক্রমে সংশ্লিষ্ট নিলামকারী কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামের সময় নির্ধারণ করে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত চতুর্দিকে এবং নিকটবর্তী স্থানে উক্ত পণ্যের বাজার থাকলে সেখানে মাইকিং করে এবং কাস্টম হাউসের নোটিশ বোর্ড এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, আমরা পচনশীল পণ্য দ্রুত নিলাম সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায় কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ পায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশে বসে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশে মামলা হচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য আয়োজন