স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন–২০০৯ অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বাজেট প্রণয়ন করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সোমবার চসিকের ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। দায়িত্বগ্রহণের প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর নিজ মেয়াদের প্রথম এ বাজেটে চট্টগ্রামকে ‘গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি’তে রূপান্তরের লক্ষ্যে নগরবাসীর প্রত্যাশিত বরাদ্দ রাখা হবে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন মেয়র।
এদিকে নগরবাসী বলছেন, নিরাপদ ও সাম্য–সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য–শিক্ষাবান্ধব ও তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ নান্দনিক পর্যটন নগর গড়ার লক্ষ্যে ৭৫টি নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেয়া ডা. শাহাদত হোসেনের প্রথম বাজেট নিয়ে তাদের আগ্রহ থাকবে। নির্বাচনী ইশতেহারে তার যে ৭৫ দফার উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি ছিল তা বাস্তবায়নে বাজেটে বিশেষ কোনো বরাদ্দ রাখা হবে কী না তা পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। এছাড়া বন্দর থেকে মোটা অংকের গৃহকর পাওয়ায় নগরবাসীর উপর করের বোঝা কমাতে মেয়র জোর দিবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
উল্লেখ্য, কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ এর ৭৬ ধারায় ১ অনুচ্ছেদের বাজেট অংশে বলা হয়েছে, কর্পোরেশন প্রতি বৎসর পহেলা জুনের পূর্বে তার পরবর্তী আসন্ন অর্থ বৎসরের প্রাক্কলিত আয়–ব্যয়ের একটি বিবরণ নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রস্তুত ও অনুমোদন করবে, যা বাজেট বলে অভিহিত হবে। কর্পোরেশন এর একটি অনুলিপি সরকারের নিকটও প্রেরণ করবেন।
চসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যদি মেয়াদ না বাড়ে তাহলে চসিকের ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের বাজেটটি হবে বর্তমান (ষষ্ঠ) পর্ষদের মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রথম ও শেষ বাজেট। তাই এ বাজেটে নগর উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও শহরের রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়া ডা. শাহাদাত–এর নিজ নির্বাচনী ইশতেহারে থাকা নাগরিক সেবা বাড়াতে নানা প্রতিশ্রুতি রক্ষায়ও গুরুত্ব পাবে বাজেটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডা. শাহাদাত আজাদীকে বলেন, বাজেটের আকার গতবারের চেয়ে একটু বাড়বে। চট্টগ্রামকে গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটিতে রূপান্তরে আমার যে স্বপ্ন সেটা অবশ্যই গুরুত্ব পাবে বাজেটে। এর বাইরে রাস্তাঘাট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের বিষয়টিও থাকবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১ খাল পুনরুদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করব। ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান করার পরিকল্পনা আছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সড়ক নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রাখা হবে এবারের বাজেটে। এতে গুরুত্ব পাবে চসিকের চলমান চারটি প্রকল্পও। প্রকল্পগুলো হল– চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প, বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া শহরের ১০০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে সম্ভাব্য একটিও প্রকল্পও গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংগ্রহে প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পের বিপরীতেও থাকবে বরাদ্দ।
এটিই কি শেষ বাজেট : স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৬ নম্বর ধারায় বলা আছে– ‘কর্পোরেশনের মেয়াদ হবে কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর’। এদিকে চসিকের বর্তমান (ষষ্ঠ) পরিষদের প্রথম সভা হয়েছে ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। ওই হিসেবে এ পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। যদি মেয়রের মেয়াদ না বাড়ে তাহলে এবারের বাজেটই হবে ডা. শাহাদাত এর প্রথম ও শেষ বাজেট।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত। তিনি ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৮ ভোট দোখিয়ে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন রেজাউল করিম। গত বছরের জুনে চসিকের ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন তিনি; যেটি ছিল ষষ্ঠ পরিষদের চতুর্থ বাজেট।
এদিকে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শাহাদাত ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে এ মামলার রায় দেন। রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন। এরপর ৮ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ একই বছরের ৩ নভেম্বর শপথ বাক্য পাঠ করেন তিনি। এর আগে সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামসহ দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে ১৭ অক্টোবর চসিক থেকে প্রশাসক বাদ দেয়া হয়।