ছাত্র–জনতার আন্দোলনে চট্টগ্রামের যে ১১ জন শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের একজন করে সদস্যের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। গতকাল বিকেলে নগর ভবনের টাইগারপাস অস্থায়ী কার্যালয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে মতবনিমিয়কালে দাবিগুলো তুলে ধরেন তারা।
এ সময় মেয়র বলেন, আপনারা যেসব দাবি জানাচ্ছেন সেগুলোর অধিকাংশ আমি শপথের পরপরই চট্টগ্রামে আসার পর বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আগস্ট মাসের যে গণহত্যা হয়েছে, সে গণহত্যায় শহীদদের আমি শ্রদ্ধা জানাই।
অন্যান্য দাবিগুলো হল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অন্যান্য দাবিগুলো হল নগরজুড়ে খেলার মাঠের সুবিধা বৃদ্ধি করা, বিপ্লব উদ্যানকে অবাধ বাণিজ্যিকীকরণ থেকে রক্ষা করে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নগরজুড়ে যে সমস্ত নালা উন্মুক্ত রয়েছে সেগুলোর উপর স্ল্যাব নিশ্চিত করা, শহর জুড়ে ভেঙে যাওয়া সড়কগুলোকে সংস্কার করা, চাঁদাবাজি–দখলবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আগ্রাবাদ মোড়ে অবৈধ হকার উচ্ছেদ করা, নগররের গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, চট্টগ্রামের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, মাদক বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।
মেয়র যা বললেন : ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ইতোমধ্যে পাহাড়তলীর শেখ রাসেল শিশু পার্কের নাম পরিবর্তন করে ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছি। আমার ইচ্ছা ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে খেলার মাঠ গড়ে তুলব। কারণ আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকার নিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ গড়ে উঠার কারণে অসচ্ছল ঘরের ছেলেরা খেলতে পারছে না। এ কারণে আমার ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা। শিশুদের খেলার মাঠে ফিরাতে পারলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং কমে আসবে।
তিনি বলেন, আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, জিয়া শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি বিপ্লব উদ্যানে গিয়েছি, সেখানে একটা স্ট্রাকচার করা হচ্ছিল সেটি ভেঙে দিয়েছি। আমি সরাসরি বলে দিয়েছি যে বিপ্লব উদ্যানে গ্রীন পার্ক হবে এবং সেখানে বিপ্লব উদ্যানের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা সেটি সম্পর্কে কিছু স্মৃতিফলক থাকবে।
শাহাদাত বলেন, আন্দোলন চলাকালে আহতদের আমি আমার দুইটা হসপিটাল ট্রিটমেন্ট এবং হলি হেলথ হসপিটালে চিকিৎসা দিয়েছি। ৫ আগস্টের পরে প্রায় প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে আমি নিজে গিয়েছি আহতদের দেখতে। চোখের সমস্যা, গুলিবিদ্ধ, হামলার শিকার অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি যথাসাধ্য সেবা দেয়ার, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে।
পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজের তদারকিতে ছাত্রদের সহায়তা চেয়ে মেয়র বলেন, ছাত্ররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগের যে কার্যক্রম চলছে তা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে পারে। ডেঙ্গু ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করতে পারে ছাত্ররা। এছাড়া স্থানীয় যে কোনো সমস্যা আমাকে জানালে আমি সমাধানের উদ্যোগ নেব।
তিনি বলেন, চসিককে ঠকিয়ে চসিকের যেসব ভূমি ও স্থাপনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিল করব। চসিকের মার্কেট ও দোকানগুলোর ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হবে।
মেয়র বলেন, নগর সরকার নাই চট্টগ্রামে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলছে না। আমি একা কথা বলছি। নগর সরকার ছাড়া পরিকল্পিত উন্নয়ন শুধু চট্টগ্রামে না সারা বাংলাদেশে অসম্ভব। সবগুলো সেবা সংস্থা যদি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কাজ না করে তাহলে কখনো পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব না। জলাবদ্ধতার প্রকল্প নিয়েও বৈষম্য হয়েছে। যে প্রকল্প চসিক করার কথা সেটা করছে সিডিএ। এখন এ প্রকল্প শেষ হলে হ্যান্ডওভার করবে চসিককে। কিন্তু এ প্রকল্প কীভাবে সচল রাখা যায়, কীভাবে এগুলোর ব্যয় নির্বাহ হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
মেয়র বলেন, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত একটা নিরাপদ শহর তৈরি করতে চাই যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একটা নিরাপদ শহরে থাকতে পারি। এই কনসেপ্টের জন্য তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমি চাই যেখানে সন্ত্রাস হবে, চাঁদাবাজি হবে, যে করুক তোমরা সেখানে দাঁড়িয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমাকে যদি তোমরা বল সেখানে আমি এসে তোমাদের সাথে সার্বিক সহযোগিতা করব।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ছাত্ররা চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে মেয়রকে সহায়তার আশ্বাস দেন।