আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নির্বাচন নিয়ে যা বলেছেন, তাতেই ‘সব কিছু স্পষ্ট হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসবিচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছে। এ কারণে জনপ্রিয় প্রার্থীরাও ভোটে দাঁড়াতে পারছে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের দুইবারের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ভোটে না দাঁড়ানোয় সেখানকার মানুষ ‘চোখের পানি ফেলছে’ মন্তব্য করে এ জন্য সরকারকে দায়ী করেন ফখরুল। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি মহাসচিব। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি–জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে এই আলোচনার আয়োজন করে দলের একাংশ। বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে দলের অবস্থান আবারও ব্যাখ্যা করে রাশেদ খান মেননের একটি বক্তব্য তুলে ধরেন ফখরুল।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে এমন একটা অবস্থা হয়েছে…তাদের (ক্ষমতাসীন জোট) যে জোট আছে ১৪ দল, ১৪ দলের এক শরিক দলের মন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আমাদের অত্যন্ত সন্মানিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব রাশেদ খান মেনন। তিনি কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না।’ মেসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার যে, আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত নির্বাচন করে, সেই নির্বাচন তিনি (রাশেদ খান মেনন) চান না। গত ১৭ এপ্রিল ওয়ার্কার্স পার্টির ৫০ বছর পূর্তিতে এক আয়োজনে মেনন বলেন, নিশ্চয় আমরা ওই পরিকল্পিত নির্বাচন চাই না। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ। তিনি সেদিন আরও বলেন, বিদেশি বন্ধুরা এই নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব উদ্বিগ্ন। এমনকি মাঝেমধ্যেই তারা স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেন, স্যাংশনের হুমকি দেন। তাদের প্রতিমুহূর্তের কথা, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হতে হবে। আমরাও বলি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে।
সিটি করপোরেশনেও ‘নীল নকশার’ নির্বাচন: পাঁচ সিটি করপোরেশনে যে ভোটের আয়োজন হয়েছে, সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এই যে মেয়র ইলেকশন হচ্ছে…বেশির ভাগ সিটি করপোরেশনে বিরোধী দল কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। সিলেটে একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় দুইবার মেয়র হয়েছেন আরিফ (আরিফুল হক চৌধুরী) এবং সিলেটের মানুষ তাকে আবারও মেয়র হিসেবে চায়। সেই আরিফ পর্যন্ত কাল (শনিবার) জনসভা করে বলেছেন যে, এই নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, নির্বাচনই হবে না। তারা ব্লু প্রিন্ট করে ফেলেছে। এই নির্বাচনে যাওয়ার অর্থই হয় না, এটা অর্থহীন হবে। আপনারা দেখেছেন সিলেটের মানুষ চোখের পানি ফেলেছে, কেঁদেছে যে, তাদের প্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না । রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব জায়গায়ই একই অবস্থা। পুরো নির্বাচনের ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানটাকেই ধবংস করে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এটাই হচ্ছে এই ধরনের কর্তৃত্ববাদী, এই ধরনের ফ্যাসিবাদী যারা, তাদের একটা হাতিয়ার। নির্বাচন নির্বাচন দেখাবে, নির্বাচন কমিশন কথা বলবে, কিন্তু তারা পুরো নির্বাচনটাকে তাদের মত করে নিয়ে যাবে।
খেলা হবে বলা ভুল বোঝাবুঝির জন্য: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায়ই ‘খেলা হবে’ বলে যে মন্তব্য করেন, তা নিয়ে নেতা–কর্মীদের সতর্ক করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা হবে আমাদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি সৃষ্টি করানোর। যারা দেশপ্রেমিক আছেন, তারা কখনো ভুল বুঝবেন না। আজকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রের মুক্তি, বাংলাদেশের মুক্তি, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং একটা সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা এক এবং অনঢ় হয়ে থাকব। এই আন্দোলন আমাদের শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় যাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে সর্বশক্তি দিয়ে নামতে হবে একাত্তর সালে যেভাবে আমরা নেমেছিলাম আজকেও একইভাবে আন্দোলনে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা আমাদেরকেই করতে হবে।
জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতও বক্তব্য দেন।