মেধাবীরা অপরাধে জড়ালে কী হয়, পি কে হালদার তার উদাহরণ : আদালত

| সোমবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

একজন মেধাবী ব্যক্তি অপরাধে জড়ালে সে যে জাতির জন্য ‘বিপজ্জনক’ হয়ে দাঁড়ায়, পি কে হালদার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে মন্তব্য এসেছে আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণে। ঢাকার দশম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গতকাল তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, যারা অবৈধভাবে বিদেশে দ্বিতীয় আবাস গড়ে তোলে, তারা ‘দেশকে ভালোবাসে না’।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের এই মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। খবর বিডিনিউজের।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, একজন নাগরিক তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাতি গঠনে যেরূপ ভূমিকা রাখতে পারে, ঠিক তেমনি অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তখন সে জাতির জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। আসামি পি কে হালদার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষ ব্যক্তি স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। পি কে হালদারের নিকট দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ অনেক বড় ছিল। আমরা যেন নিজের সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য মানি লন্ডারদের সহযোগী না হই।

বিচারক বলেন, পি কে হালদার মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবর্তে সম্পদ গড়ার নেশায় মত্ত হন। তার মা ও ভাইসহ ঘনিষ্ঠজনের সহযোগিতায় অসংখ্য নামিবেনামি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে পাহাড়সম অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। যে ব্যক্তিরা বিদেশে অবৈধভাবে দ্বিতীয় আবাস গড়ে তোলে, তারা দেশকে ভালোবাসে না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিটের আলোকে অর্থপাচার প্রতিহত করতে হবে।

প্রশান্ত কুমার হালদারদের কোনো আদর্শ নেই মন্তব্য করে বিচারক বলেন, তারা দেশের উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। প্রকৃতপক্ষে এরা দেশের শত্রু।

পর্যবেক্ষণে কানাডা সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, এটা অতীব দুঃখের বিষয় যে, যদিও পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা করার জন্য অনেক আগে কানাডা সরকারকে আহ্বান করা হয়েছিল, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা ছাড়া অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব নয়। একজন বিচারক শুধু রেকর্ড ও নথি দেখে রায় ঘোষণা করতে পারেন মন্তব্য করে বিচারক বলেন, এতে এক পক্ষ খুশি হবে, অপর পক্ষ অখুশি হয়। দুই পক্ষকে কখনো খুশি করা যায় না। আর এটা বিচারকের কাজও না। আমাদের রেকর্ডে যা আছে তা দেখেই আমাদের জাজমেন্ট দিতে হয়। রেকর্ডে কিছু তথ্য সত্য থাকে, কিছু মিথ্যা থাকে, ডকুমেন্টস কিছু ফলস থাকতে পারে। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব বিচারবিশ্লেষণ করে রায় দেওয়ার চেষ্টা করি। কংক্রিট জাস্টিস আমরা দিতে পারি না। মহান সৃষ্টিকর্তা তা দিতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছর কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধআর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ-আমানতে নতুন সুদহার