মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিলেই খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা

ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জাহিদ ।। মঙ্গলবার ঢাকায় আসার সূচি চেয়েছে জার্মান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খালেদাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে ভিভিআইপি মুভমেন্ট ঘোষণা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে মেডিকেল বোর্ড সবুজ সংকেত দিলেই কেবল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে বলে বিএনপির তরফে জানানো হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিমান ভ্রমণের জন্য শারীরিক সক্ষমতা না থাকায় খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় বিলম্ব হওয়ার কথা জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন এ কথা জানান।

এদিকে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে, সেটি মঙ্গলবার ঢাকায় আসার সূচি চেয়েছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আর খালেদাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে ভিভিআইপি মুভমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শুক্রবার ভোরের দিকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে সেই বিমান আসতে বিলম্ব হওয়ার কথা জানায় বিএনপি। এরপর শুক্রবার বলা হয়, কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আর আসছে না। তার বদলে কাতারের আমির জার্মানি থেকে ভাড়া করে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাবেন। সেই অ্যাম্বুলেন্স কবে বাংলাদেশে আসবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে গতকালের ব্রিফিংয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ওই সময় (শুক্রবার) এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কারিগরি ত্রুটির কারণে আসতে পারেনি, এটাও যেমন সত্য কথা, ওই সময়ে জরুরিভাবে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, এ মুহূর্তে উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্য উনাকে বিদেশ নেওয়ার যে বিষয়টি, সেটি কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে উনাকে কখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যাবে অথবা নিয়ে যাওয়া হবে।

তিনি বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। কিন্তু প্রস্তুত থাকলেও খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে আসা চিকিৎসকরা উনার শারীরিক অবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, আমরা মনে করি, দেশের সব মানুষ উনার সুস্থতা চায়, চিকিৎসকরা চায়, দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা, সব মতাদর্শের মানুষই চায়। যেহেতু উনার স্বাস্থ্য আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সেজন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব চিকিৎসকদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দলও সে অনুযায়ী অধিকার দিচ্ছে।

যখনই সক্ষম হবেন, তখনই ফ্লাই করবেন : অধ্যাপক জাহিদ বলেন, বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই বিদেশ নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড যথোপযুক্ত মনে করবে, তখনই উনাকে বিদেশ নেওয়া হবে। কারণ মনে রাখতে হবে, ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা যখন বিমানে ফ্লাই করবেন, তখন যে অতি উচ্চতায় মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয়, সেটির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না। এ জিনিসটি খেয়াল রেখে আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না, দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবেন না।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাতার সরকার এবং আমাদের যে অন্তর্বর্তী সরকার, সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা করছে। উনার শারীরিক সুস্থতা এবং চিকিৎসা মেডিকেল বোর্ডের যখন পরামর্শ মিলবে, তখনই ইনশাআল্লাহ উনাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।

গুজবে কান দেবেন না : জাহিদ বলেন, উনার চিকিৎসার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গুজব শোনা যায়। আমি সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, দয়া করে দেশনেত্রীর প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ, দয়া করে কেউ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।

জাহিদ বলেন. শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেন। এর চেয়ে প্রতিকূল অবস্থা থেকেও আল্লাহ উনাকে সুস্থ করেছেন আপনাদের সবার দোয়ায়। আমরাও মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত আশাবাদী যে, এবারও উনার যে শারীরিক জটিলতা, এটা থেকে আপনাদের দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ইনশাআল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন।

দুঃখ প্রকাশ : জাহিদ বলেন, দেশনেত্রীর চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এবং হাসপাতালের সব কর্মী সহযোগিতা করছেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অনেক রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজন আমাদের কারণে হয়তো নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন, সেজন্য আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাদের সহযোগিতা চাই এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া উনার চিকিৎসা কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখা কষ্ট হবে।

২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই মেডিকেল বোর্ডে তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানও সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তিনি লন্ডন থেকে শুক্রবার ঢাকায় নেমে শাশুড়িকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।

অবস্থা অপরিবর্তিত : খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা মোটাদাগে অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে গতকাল আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো বিমানযাত্রার সক্ষমতা অর্জন করেনি। সেজন্যই লন্ডনযাত্রা বিলম্ব হচ্ছে। তবে এক চিকিৎসক দুপুরে বলেন, অনেকগুলো প্যারামিটার পজিটিভ সাইন দিচ্ছে, তবে অবস্থার উন্নতি হয়েছে এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা আশা করছি, পজিটিভ সাইন অব্যাহত থাকলে উনি ৯১০ তারিখের (ডিসেম্বর) দিকে ফ্লাই করার সক্ষমতা অর্জন করতেও পারেন।

এদিকে বিএনপির তরফে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনি গতকাল দুপুরে বলেন, ম্যাডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ আসবে। সেইভাবে তারা (কাতার) এখন প্রস্তুত রয়েছে। এখন মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে এবং ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষ অ্যারেজমন্টে করেছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় আসার সূচি চেয়েছে জার্মান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স : চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে, সেটি মঙ্গলবার ঢাকায় আসার সূচি চেয়েছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বেবিচকের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা বলেন, জার্মান এয়ারলাইন্স এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আবেদনটি করেছে। আবেদনে আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় অবতরণ এবং পরের দিন লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার সূচি চাওয়া হয়েছে।

ঢাকায় কাতার দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানির নুরেমবার্গভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি। এটি বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার (সিএল৬০) সিরিজের দুই ইঞ্জিনের জেট উড়োজাহাজ। এতে অ্যাম্বুলেন্সের যাবতীয় সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

খালেদাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে ভিভিআইপি মুভমেন্ট ঘোষণা : বাংলানিউজ জানায়, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার লক্ষ্যে নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইটের অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। গতকাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, ৯ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকা ত্যাগ করবে বলে প্রাথমিক শিডিউল অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি জানান, ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। সময়সূচির চূড়ান্ত নিশ্চয়তা পেলেই সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট সক্রিয় হয়ে উঠবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে, ভারতে হাসিনার থাকা প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর
পরবর্তী নিবন্ধদুই-চারটা আসনের জন্য কারো সঙ্গে জোট করব না : নুর