মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে মাদক মামলা ১২ হাজার ছাড়াল

দায়ের বেশি, নিষ্পত্তি কম আদালতের সংখ্যা কম হওয়ায় এই অবস্থা

হাবীবুর রহমান | মঙ্গলবার , ১৬ জুলাই, ২০২৪ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মাদকের মামলা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। আদালতের চলতি বছরের ২য় ত্রৈমাসিক ফৌজদারি মামলার শ্রেণীগত পরিসংখ্যান বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে নতুন মামলা যুক্ত হওয়ার চেয়ে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা অনেক কম। ২৭৯টি মামলা নিষ্পত্তির সময়কালে অর্থাৎ গত এপ্রিলের শুরু থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে মাদকের নতুন মামলা যুক্ত হয়েছে ৪৬৩টি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে নগরীর ১৬ থানা থেকে মামলা আসে। এসব মামলা বিচারের জন্য আদালত রয়েছে মাত্র আটটি।অথচ প্রয়োজন ১৬ থানার জন্য ১৬টি আদালত। মূলত আদালতের সংখ্যা কম হওয়ায় মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে ১২ হাজারের উপর বিচারাধীন মাদকের মামলা জমা হয়েছে। একই কারণে নতুন মামলা যোগ হওয়ার চেয়ে নিষ্পত্তির সংখ্যাও কম দেখা যাচ্ছে। মাদকসহ আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থানা থেকে যে হারে আদালতে মামলা যুক্ত হচ্ছে সে হারে নিষ্পত্তির সংখ্যা বাড়াতে হলে আদালতের সংখ্যা বাড়াতেই হবে।

আদালত থেকে প্রাপ্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে (বিচারিক ফাইল) গত এপ্রিলের শুরুতে বিচারাধীন মাদকের মামলা ছিল ১২ হাজার ৭৫৯টি। জুনের শেষ পর্যন্ত বিচারের জন্য নতুন যোগ হয় ৫১২টি। সবমিলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ২৭১ টি। এ সময় নিষ্পত্তি হয় ২৭৯ টি। অবশিষ্ট থাকে ১২ হাজার ৯৯২ টি মামলা। উক্ত ১২ হাজার ৯৯২ টি মাদকের মামলাই বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসির আমলী ফাইলে দেখা যায়, আমলী ফাইলে এপ্রিলের শুরুতে মাদক মামলা ছিল ৩৯৮টি। নতুন দায়ের হয় ৪৬৩ টি। বদলি হয় ৪৪১টি। জুনের শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯০টি।

আদালতের পরিসংখ্যান বিষয়ক প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে মামলা যোগ হয়েছে ৪৬৩টি। বিপরীতে নিষ্পত্তি মাত্র ২৭৯টি। তিন মাসে নিষ্পত্তির চেয়ে ১৮৪ টি মামলা বেশি দায়ের হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো উঠে আসে, মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে (বিচারিক ফাইল) মাদকের মামলাই সবচেয়ে বেশি বিচারাধীন মামলা রয়েছে। এরপরে রয়েছে যৌতুকের মামলা। আদালতটিতে ২ হাজার ১৮৩ টি যৌতুকের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে আমলী ফাইলে সবচেয়ে বেশি বিচারাধীন মামলা রয়েছে এন আই অ্যাক্টের মামলা। এ সংখ্যা ৪ হাজার ৬৫৭ টি। এর পরের অবস্থান যৌতুকের মামলা। আমলী ফাইলে মোট ১ হাজার ৬৪৯ টি যৌতুকের মামলা রয়েছে। মটরযান মামলা বিচারাধীন রয়েছে ৮৫৭ টি। এছাড়া নারী শিশু মামলা রয়েছে ৫২৮ টি। আদালতসূত্র জানায়, মাদকের প্রায় ১৩ হাজারসহ মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসিতে বর্তমানে ৫৫ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মামলার আনুপাতিক হারে নিষ্পত্তি অনেক কম। নিষ্পত্তি কম হওয়ায় আদালতে দিন দিন মামলা বাড়ছেই। নিষ্পত্তি বাড়াতে হলে অবশ্যই আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ১৬ থানার জন্য মাত্র আটজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে, তা অনেক কম। এই আটজন ম্যাজিস্ট্রেটের অনেক কাজ। তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিতে হয়। সিআর মামলা আমল গ্রহণ করতে হয়। দেখা যায়, সাক্ষীরা নিয়মিত হাজির হয় না। এসব বিষয়ও গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হলে এবং সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা নিশ্চিত করতে পারলে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধ৪০০ কোটি টাকার মালিক সেই পিয়নের ব্যাংক হিসাব স্থগিত