ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যার মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খান যে দেশে নেই, অবশেষে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানাল পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফয়সাল ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। মেঘালয় পুলিশ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে।
ওসমান হাদি হত্যা মামলায় তদন্তের অগ্রগতি জানাতে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তের শেষ পর্যায়ে রয়েছে, আশা করছি আগামী ৭–১০ দিনের মধ্যে আমরা চার্জশিট প্রদান করতে সক্ষম হব।
এদিকে ডিএমপির দাবি প্রত্যাখ্যান করেন মেঘালয় পুলিশ বলছে, ফয়সাল ভারতে নেই। কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
কেন হাদিকে হত্যা করা হলো, সেই মোটিভ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ। নজরুল ইসলাম বলছেন, যেহেতু মূল সন্দেহভাজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি, মোটিভও এখনো জানা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল বলেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত হওয়ায় আসামিদের শনাক্ত করার আগেই তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে যায়। ফয়সাল ও আলমগীর প্রথমে ঢাকা থেকে সিএনজিতে করে আমিনবাজারে যায়। সেখান থেকে মানিকগঞ্জের কালামপুরে ও পরে প্রাইভেটকারে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছায়। সেখানে ফিলিপ নামে একজন তাদেরকে সীমান্ত পার করে পুত্তির নামে একজনের কাছে হস্তান্তর করে। তারপর সামি নামে আরেক টেঙি ড্রাইভারের কাছে তাকে দেওয়া হয়। সামি তাদেরকে মেঘালয়ের তুরা শহরে পৌঁছে দেয়। তিনি বলেন, ইনফরমাল চ্যানেলে আমরা মেঘালয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, সেখানে তারা পুত্তির ও সামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
হাদি হত্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। গ্রেপ্তাররা হলেন মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট–এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ভারতে পালাতে সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। তদন্তে নেমে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, মোটরসাইকেল ও ভুয়া নম্বর প্লেট এবং ৫৩টি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক উদ্ধারের কথাও জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।
ফয়সাল ভারতে নেই, কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি : ওসমান হাদি হত্যার প্রধান সন্দেহভাজনের পালিয়ে ভারতে যাওয়া এবং তাকে সহায়তার অভিযোগে দেশটিতে দুজন গ্রেপ্তার হওয়ার যে তথ্য ঢাকার পুলিশ দিয়েছে, মেঘালয় পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। গতকাল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীও (বিএসএফ) ডিএমপির দাবি দুটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টা দুয়েক পর হিন্দুস্তান টাইমসের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিএসএফ ও মেঘালয় পুলিশের বরাত দিয়ে ডিএমপির দাবি অস্বীকার করা হয়। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাদি হত্যার প্রধান দুই সন্দেহভাজন হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন এবং এখন সেই রাজ্যে অবস্থান করছেন– বাংলাদেশ পুলিশের এমন বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন মেঘালয় পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
মেঘালয় পুলিশ সদর দপ্তরের ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযুক্তদের কাউকেই গারো পাহাড়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং কোনো গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
মেঘালয় পুলিশের ওই শীর্ষ কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, পুত্তি বা সামি নামে কাউকেই মেঘালয়ের কোথাও শনাক্ত করা যায়নি, খুঁজে পাওয়া বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা যায়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো প্রকার ভেরিফিকেশন বা সমন্বয় ছাড়াই এই বিবরণ তৈরি করা হয়েছে।
মেঘালয় পুলিশের এই দাবির পক্ষে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও সমর্থন জানিয়েছে। বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের মহাপরিদর্শক ওপি উপাধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করে বলেন, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে এই ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার হয়ে মেঘালয়ে প্রবেশের প্রমাণ নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘটনা শনাক্ত বা রিপোর্ট করা হয়নি। এই দাবিগুলো ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গেল ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই ওই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর দুদিন পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৮ ডিসেম্বর হাদির মৃত্যুর খবর আসে।












