বিজ্ঞান গবেষণা, শিক্ষা, জ্যোতির্বিদ্যা এবং প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে দেশ সেবায় একজন স্মরণ্য ব্যক্তিত্ব মেঘনাদ সাহা। প্রধানত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিশ শতকের শুরুতে বাংলায় আধুনিকতার প্রসারে তাঁর অবদান সুদূরপ্রসারী। আজ তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী।
মেঘনাদ সাহার জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের শেওড়াতলী গ্রামে ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর। শৈশব কেটেছে নিদারুণ দারিদ্র্যে। নিত্য অনটনের মধ্যেও অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ১৯০৫ সালে তাঁকে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হলে ভর্তি হন ঢাকা জুবলি স্কুলে। এখান থেকেই ১৯০৯ সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলার ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রবেশিকা পাশ করেন। পরবর্তীকালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে অনার্স ও এম.এসসি পাশ করেন কৃতিত্বের সাথে। এরপর বিভিন্ন মেধাবৃত্তি নিয়ে মেঘনাদ সাহা উচ্চতর গবেষণার জগতে প্রবেশ করেন। ১৯১৯ সালে লাভ করেন পি.এইচডি ডিগ্রি। নভোপদার্থবিদ্যায় গবেষণা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। কর্মজীবনে মেঘনাদ কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ‘গ্যাসের তাপীয় আয়নায়ন’ বিষয়ে গবেষণা সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যায় নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেন মেঘনাদ। কালজয়ী পদার্থবিদ আইনস্টাইন সহ দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান বিজ্ঞানীর সাহচর্য লাভের সুযোগ হয় তাঁর। সমাজ সংস্কারমূলক নানা কাজের মাধ্যমেও তিনি দেশ সেবায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। পঞ্জিকা সংস্কারের কাজে যুক্ত ছিলেন। বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়েও তাঁর গবেষণা উন্নয়ন কর্মসূচির পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে যুক্ত থেকেছেন মেঘনাদ।
এ লক্ষ্যে গঠন করেছিলেন ‘বেঙ্গল রিলিফ কমিটি’। কলকাতার ‘সাহা ইনস্টিটিউট’ তাঁরই প্রতিষ্ঠিত। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার ফেলো ও সদস্য ছিলেন বরেণ্য এই বিজ্ঞানী। ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মেঘনাদ সাহা প্রয়াত হন।